ডাউনলোড করুন
0 / 0

এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ ও এতিমকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করার মধ্যে পার্থক্য

প্রশ্ন: 5201

কসোভোর অনেক নাগরিক শরণার্থী হিসেবে আমেরিকাতে প্রবেশ করছে। অনেক সময় খ্রিস্টান সংস্থাগুলো তাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিয়ে থাকে। মুসলিম ভাইদের কেউ কেউ এতিমদের অভিভাবকত্ব নিতে চান: তাদেরকে নিজেদের বাসায় নিয়ে তাদের সাথে রাখবেন, তাদের খাবারদাবারের দায়িত্ব নিবেন। জনৈক শাইখ বলেন যে, এটা হারাম, ইসলামে পালক সন্তান গ্রহণ করা জায়েয নেই। তিনি মানুষকে এতিমদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন না। ইসলাম কি এতিমদেরকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করার অনুমতি দেয়; এতিমের নাম পরিবর্তন না করে? যে এতিমের দায়িত্ব গ্রহণ করা হল সে এতিম কি অভিভাবকত্ব গ্রহণকারীর শিশু হিসেবে বিবেচিত হবে?

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

সন্তান হিসেবে গ্রহণ করা ও এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করার মাঝে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে:

ক. সন্তান হিসেবে গ্রহণ করা: অর্থাৎ কোন ব্যক্তি একজন এতিমকে নিজের ঔরশজাত সন্তানের মত করে গ্রহণ করা। সে এতিমকে ঐ ব্যক্তির ছেলে হিসেবে ডাকা হবে, ঐ ব্যক্তির মাহরাম নারীগণ এই পালক পুত্রের জন্য হালাল হবে না; পালক পিতার ছেলেরা হবে তার ভাই, মেয়েরা হবে তার বোন, বোনেরা হবে তার ফুফু এভাবে। এটি জাহেলী যামানার প্রথা। এমনকি এ ধরণের কিছু নাম সাহাবীদের মাঝেও ছিল; যেমন- মিকদাদ বিন আসওয়াদ। যেহেতু তার পিতার নাম ছিল­­— আমর। কিন্তু, যে ব্যক্তি তাকে ছেলে হিসেবে লালনপালন করেছেন তার নামে তাকে ‘বিন আসওয়াদ’ বলা হত।

ইসলামের প্রথম দিকেও এ প্রথা জারী ছিল। এক পর্যায়ে এক প্রসিদ্ধ ঘটনায় আল্লাহ্‌ পালক-পুত্র গ্রহণকে হারাম করে দেন। যেহেতু যায়েদ বিন হারেছা কে যায়েদ বিন মুহাম্মদ ডাকা হত। যায়েদ (রাঃ) যয়নব বিনতে জাহাশ (রাঃ) এর স্বামী ছিলেন এবং তিনি তাকে তালাক দেন।

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “যখন যয়নব-এর ইদ্দত পালন শেষ হল তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যায়েদ বিন হারেছাকে বললেন: যাও; তাকে আমার বিয়ের প্রস্তাব দাও। যায়েদ যখন যয়নবের কাছে এল তখন যয়নব আটার খামির বানাচ্ছিলেন। যায়েদ বললেন: যয়নব! সুসংবাদ গ্রহণ কর। আমাকে রাসূলুল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাঠিয়েছেন তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য। যয়নব বললেন: আমি আমার রবের কাছে পরামর্শ চাওয়া ব্যতীত কোন সিদ্ধান্ত নিব না। যয়নব তখন যায়নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন। ইত্যোবসরে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চলে আসলেন এবং যয়নবের ঘরে প্রবেশ করলেন। এ ঘটনা প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌ তাআলা নাযিল করেন: “আর স্মরণ করুন, যখন আপনি সে ব্যক্তিকে বলেছিলেন (আপনার পালকপুত্র যায়েদ বিন হারিছাকে বলেছিলেন) যার প্রতি আল্লাহ্‌ অনুগ্রহ করেছেন এবং আপনিও অনুগ্রহ করেছেন ‘তোমার স্ত্রীকে রেখে দাও এবং আল্লাহ্‌কে ভয় কর’। আপনি আপনার অন্তরে একটি কথা (আল্লাহ্‌র এ সিদ্ধান্তের কথা যে, তিনি যায়েদের স্ত্রী যয়নবকে আপনার স্ত্রী করে দেবেন) লুকিয়ে রেখেছিলেন যা আল্লাহ্‌ প্রকাশ করে দিচ্ছেন। (এ ক্ষেত্রে) আপনি মানুষকে ভয় করছিলেন (অর্থাৎ মানুষের এ কথাকে ভয় করছিলেন যে, মুহাম্মদ পুত্রবধুকে বিয়ে করেছে), অথচ আপনার ভয় করার কথা তো আল্লাহ্‌কে। অতঃপর যায়েদ যখন তার সাথে (স্ত্রী যয়নবের সাথে) সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দিলাম; যাতে (ভবিষ্যতে) পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তাদের ব্যাপারে (তাদেরকে বিয়ে করতে) মুমিনদের কোন বাধা না থাকে। আর আল্লাহ্‌র আদেশ কার্যকর হয়েই থাকে।”[সূরা আহযাব, ৩৩:৩৭][সহিহ মুসলিম (১৪২৮)]

খ. আল্লাহ্‌ তাআলা দত্তক গ্রহণ করাকে হারাম করেছেন। কেননা এতে বংশপরিচয় বিলুপ্ত হয়ে যায়। অথচ আমাদেরকে বংশপরিচয় সংরক্ষণ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি জেনেশুনে তার পিতাকে বাদ দিয়ে অন্য ব্যক্তির পরিচয় গ্রহণ করল সে কুফরি করল। যে ব্যক্তি নিজেকে এমন কোন কবিলার পরিচয় দেয় যাদের সাথে তার সম্পর্ক নেই সে যেন জাহান্নামে তার স্থান করে নেয়।”[সহিহ বুখারী (৩৩১৭) ও সহিহ মুসলিম (৬১)]

এখানে কুফরি করার অর্থ হল— সে কাফেরদের কর্মে লিপ্ত হল; এর অর্থ এটা নয় যে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেল। কারণ এ কাজের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ যেটাকে হালাল করেছেন সেটাকে হারাম করা এবং আল্লাহ্‌ যেটাকে হারাম করেছেন সেটাকে হালাল করা হয়ে থাকে।

কেননা পালক পিতার মেয়েদেরকে পোষ্যপুত্রের জন্য হারাম করা বৈধ বিষয়কে হারাম করা; যেটা আল্লাহ্‌ হারাম করেননি। আবার পালক-পিতার মৃত্যুর পর পরিত্যক্ত সম্পত্তির ভাগ নেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ যা হারাম করেছেন সেটাকে বৈধতা দেওয়া হয়। যেহেতু মিরাছ বা পরিত্যক্ত সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার শুধুমাত্র ঔরশজাত সন্তানদের।

দত্তক গ্রহণ করলে পালকপুত্র ও ঔরশজাত পুত্রদের মাঝে বিবাদ-বিসম্বাদ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ এর ফলে ঔরশজাত সন্তানদের কিছু অধিকার নষ্ট হয়ে সেটা এ এতিমের দিকে চলে যায়; যেটা পাওয়ার অধিকার তার নেই। তারা মন থেকে জানে যে, এ এতিম তাদের সাথে হকদার নয়।

পক্ষান্তরে, এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা হচ্ছে— এতিমকে নিজ সন্তান না বানিয়ে নিজের বাড়ীতে রাখা কিংবা অন্য কারো বাড়ীতে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেয়া, তার জন্য এমন কিছুকে হারাম না করা; যা তার জন্য হালাল এবং এমন কিছুকে হালাল না করা; যা তার জন্য হারাম; যেমনটি ঘটে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করলে।

বরং আল্লাহ্‌ তাআলার পরে ইয়াতীমের অভিভাবক হচ্ছেন একজন দয়ালু অনুগ্রহকারীর ভূমিকায়। তবে এতিমের অভিভাবককে পালক-পিতার সাথে তুলনা করা যাবে না; এ দুটোর মাঝে সাদৃশ্যতার ভিন্নতা থাকার কারণে এবং এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করার প্রতি ইসলাম উদ্বুদ্ধ করার কারণে।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তারা আপনাকে ইয়াতিমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন ‘তাদের পুনর্বাসনই উত্তম। তোমরা যদি তাদের সাথে একত্রে থাক তবে তারা তো তোমাদেরই ভাই।’ আল্লাহ্‌ জানেন কে অকল্যাণকারী আর কে কল্যাণকারী। আল্লাহ্‌ চাইলে (এ ব্যাপারে) তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে পারতেন। আল্লাহ্‌ তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[সূরা বাক্বারা, ২:২২০]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণকে জান্নাতে সার্বক্ষণিক তাঁর সাথে থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সাহল বিন সাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে এভাবে থাকব: তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করেন এবং আঙ্গুলদ্বয়ের মাঝে সামান্য ফাঁকা রাখেন।”[সহিহ বুখারী (৪৯৯৮)]

তবে এ বিষয়ে খেয়াল রাখা আবশ্যক যে, এ এতিমগণ যখনই প্রাপ্তবয়স্ক হবে তখনই তাদেরকে অভিভাবকের স্ত্রী ও মেয়েদের থেকে আলাদা রাখতে হবে; যাতে করে এক দিকের কল্যাণ করতে গিয়ে অপর দিকের অকল্যাণ না করেন। অনুরূপভাবে এ ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে যে, পালিত এতিম মেয়ে-শিশু ও সুন্দরী হতে পারে। ফলে বালেগ হওয়ার আগেই ছেলেদের কামনার পাত্র হয়ে যেতে পারে। তাই অভিভাবকের দায়িত্ব হবে নিজের ছেলেদেরকে চোখে চোখে রাখা; যাতে করে তারা পালিত এতিমদের সাথে কোন হারাম কর্মে লিপ্ত হতে না পারে। কারণ এ ধরণের ঘটনা কখনও কখনও ঘটে থাকে এবং এমন অকল্যাণ ঘটায় যার সুরাহা করা করা দুরূহ।

আমরা আমাদের ভাইদেরকে এতিমদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করছি। এতিমের অভিভাবকত্ব গ্রহণ এমন একটি ভাল গুণ যা অতি বিরল; কেবল আল্লাহ্‌ যাদেরকে দ্বীনদারি, নেককাজের প্রতি ভালবাসা এবং এতিম-মিসকীনের প্রতি সহানুভূতি দিয়েছেন তারা ব্যতীত। বিশেষতঃ কসোভো ও চেচনিয়ার ভাইয়েরা যে সংকট ও নির্যাতনের মুখে রয়েছেন। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন, তাদেরকে সংকট ও কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android
at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android