0 / 0

যিনি পরদিন সফর করবেন বিধায় রোযা না-রাখার নিয়ত করেছেন; কিন্তু পরে সফরে যাওয়া হয়নি

প্রশ্ন: 66086

প্রশ্ন :

এক ব্যক্তি সফরে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করে রোযা না-রাখার নিয়ত করেছেন। ফজর হওয়ার পর তিনি তার সফর বাতিল করেছেন; কিন্তু রোযা ভঙ্গকারী কোন বিষয়ে লিপ্ত হননি। এক্ষেত্রে তার হুকুম কি?

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

সমস্তপ্রশংসাআল্লাহর জন্য।

ক্বুরআন,সুন্নাহ ওইজমা এর দলীলদ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজনমুসাফিররমজানে রোযাভঙ্গ করতেপারে। তবেতাকে সম সংখ্যকরোযার কাযাকরতে হবে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

( وَمَنْ كَانَ مَرِيضاً أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْأَيَّامٍ أُخَرَ ) [2 البقرة: 185]

“আর কেউ অসুস্থ থাকলেকিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এইসংখ্যা পূরণকরবে।”[সূরাবাক্বারা, ২ : ১৮৫]

যেব্যক্তি তারনিজ শহরেঅবস্থানকরছেন এবং সফরকরারব্যাপারে দৃঢ়সংকল্প করেছেনতিনি নিজশহরেরবাড়িঘরেরসীমানা অতিক্রমকরার আগ পর্যন্ত ‘মুসাফির’ হিসেবেগণ্য হবেন না।তাই শুধুসফরের নিয়্যত করলেইমুসাফিরেরঅবকাশসমূহ (রোখসত)যেমন- রোযাভঙ্গ করা,সালাতসংক্ষিপ্তকরা ইত্যাদি গ্রহণকরা হালাল নয়।কারণ আল্লাহতা‘আলামুসাফিরেরজন্য রোযা ভঙ্গ করাবৈধ করেছেন। নিজ শহরঅতিক্রম নাকরা পর্যন্ত কেউ‘মুসাফির’ বলেগণ্য হবে না।

ইবনেক্বুদামাহ‘আল-মুগনী’ (৪/৩৪৭)গ্রন্থে ‘যেব্যক্তিদিনের বেলায়সফর করেন তিনিরোযা ভঙ্গকরতে পারবেন’ উল্লেখকরার পর বলেছেন: “যখন এটিসাব্যস্ত হলতখন তার জন্যরোযা ভঙ্গ করাততক্ষণপর্যন্তজায়েয হবে নাযতক্ষণপর্যন্ত নাতিনি তারশহরের ঘরবাড়িপিছনে ফেলেআসেন। অর্থাৎআবাসিক এলাকাঅতিক্রম করে এরভবনসমূহ থেকেদূরে চলেআসেন।” তবে হাসান(রহঃ) বলেছেন: “যেদিনতিনি সফর করতেচান সেদিনতিনি চাইলে তারনিজ বাড়িতেইরোযা ভঙ্গকরতে পারেন।”একই রকমঅভিমত আত্বা (রহঃ)হতেও বর্ণিতআছে। এব্যাপারে ইবনেইবনে আব্দুলবার্‌র (রহঃ)বলেছেন:হাসান(রহঃ)এর বক্তব্যটিবিরল। নিজ শহরেথাকা অবস্থায়রোযা ভঙ্গ করাকারো জন্যজায়েয নয়।কিয়াস দ্বারাঅথবাকুরআন-হাদিসেরদলীল দ্বারাএটাকে জায়েযকরা যায় না।হাসান(রহঃ) হতেবিপরীতধর্মীবক্তব্যওবর্ণিত আছে।”

এরপরইবনেক্বুদামাবলেন:“আল্লাহ তা’আলাবলেছেন :

(فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ )[2البقرة : 185]

“তোমাদেরমধ্যে যেব্যক্তি এইমাসে উপস্থিতআছে,সে যেন এতেরোযা পালনকরে।”[সূরাবাক্বারা, ২:১৮৫]অর্থাৎ যেব্যক্তি شَاهِد।এখানেشَاهِد মানে- (حاضر لميسافر) যিনিউপস্থিত আছেন,সফর করেননি।নিজ শহর থেকেবের না-হওয়াপর্যন্ত তিনিমুসাফিরহিসেবে গণ্যহবেন না।যতক্ষণপর্যন্ত তিনিনিজ শহরেঅবস্থান করছেনততক্ষণপর্যন্তমুকিমের(স্বগৃহেঅবস্থানকারীর)হুকুমসমূহতার উপরবর্তাবে। তাইতিনি সালাত সংক্ষিপ্তকরবেন না”। সমাপ্ত

শাইখ ইবনে ‘উছাইমীনকেপ্রশ্ন করাহয়েছিল:

এমন একব্যক্তিসম্পর্কে, যিনি সফরেরনিয়্যতকরেছেন এবংঅজ্ঞতাবশতঃ নিজগৃহে থাকতেইতিনি রোযাভেঙ্গেফেলেছেন, তারপরসফরে বেরহয়েছেন – তারউপর কাফফারা দেয়াকি ওয়াজিব?

তিনিউত্তরে বলেন : “তারজন্য নিজবাড়িতে রোযাভঙ্গ করাহারাম। কিন্তুতিনি যদি সফরেবের হওয়ার ঠিকআগ মুহূর্তেরোযা ভেঙ্গেথাকেন তাহলেতাকে শুধুরোযা কাযাকরতে হবে।”সমাপ্ত [ফাতাওয়াআস-সিয়াম(পৃঃ১৩৩)]

আশ-শারহুল-মুমত্বি(৬/২১৮) গ্রন্থে তিনিবলেছেন :

“রাসূলেরসুন্নাহ ও সাহাবীগণ হতেবর্ণিতবাণীসমূহেরয়েছে যে,কেউদিনেরবেলা সফর করলে রোযাভঙ্গ করতেপারে। এক্ষেত্রে তার নিজগ্রাম ছেড়েযাওয়া শর্তকিনা? নাকিসফরেরদৃঢ় সংকল্পনিয়েবের হলেই রোযা ভঙ্গকরতে পারবে?

উত্তর: সলফেসালেহীন (সাহাবী, তাবি‘ঈ ও তাবে-তাবি‘ঈ) হতে এব্যাপারেদুইটি মতবর্ণিতহয়েছে।আলেমগণেরমধ্যে অনেকে এমত পোষণ করেনযে, কেউ যদিসফরে যাওয়ারজন্যপ্রস্তুতিনেয় শুধু বাহনেআরোহণ করাবাকি থাকে, তাহলে তারজন্য রোযাভঙ্গ করা জায়েয। এব্যাপারেতাঁরা আনাসরাদিয়াল্লাহুআনহু হতেউল্লেখকরেন যে,তিনি এমনটিকরতেন।আপনিযদি আয়াতেকারীমাটিপর্যালোচনাকরেন তাহলেদেখবেন যে, এ মতটিশুদ্ধ নয়।কারণ সেব্যক্তি এখনপর্যন্তমুসাফির হয়নি, তিনিএখন পর্যন্তমুক্বীম(স্বদেশেঅবস্থানকারীব্যক্তি)রয়েছেন। এরউপর ভিত্তিকরে বলা যায়, তার জন্যনিজ গ্রামের বাড়িঘরঅতিক্রম নাকরা পর্যন্তরোযা ভঙ্গ করাজায়েয নয়।

অতএবসঠিক মত হল, সে নিজএলাকা ত্যাগনা করাপর্যন্ত রোযাভঙ্গ করবে না।এ কারণে নিজশহর থেকে বেরনা হওয়া পর্যন্তসালাতসংক্ষিপ্তকরা বৈধ নয়।একই ভাবে নিজএলাকা থেকেবের না হওয়াপর্যন্ত রোযাভঙ্গ করা জায়েয নয়।”সমাপ্ত[সংক্ষিপ্তও কিছুটাপরিমার্জিত]

এর উপরভিত্তি করেবলা যায়, যেব্যক্তি রাতথাকতেই সফরকরার ব্যাপারেদৃঢ় সংকল্পকরেছেন তারজন্য রোযাভঙ্গকারীহিসেবে দিনশুরু করাজায়েয নয়। বরংতাকে রোযারনিয়্যত করতে হবে।এরপর দিন শুরুহলে তিনি যদিসফর করেন এবং তারনিজ গ্রামেরবাড়িঘরঅতিক্রম করেন তখনরোযা ভঙ্গ করাতার জন্যজায়েয হবে।

মোদ্দাকথা,যেব্যক্তিপরদিন সফরকরারসিদ্ধান্তনিয়েছেনবিধায় রাতেরোযার নিয়তকরেননি তিনিভুল করেছেন।এক্ষেত্রেতাকে সেইদিনেরপরিবর্তেকাযা রোযাআদায় করতেহবে। যদি ধরেওনেওয়াহয় যে, পরদিনতিনি সফরকরেনি। কারণতিনি রাতথাকতে রোযারনিয়ত করেননি।নবীসাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন:

( مَنْ لَمْ يُجْمِعْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَلَهُ ) رواه أبو داود (2454) والترمذي (730) وصححه الألباني في صحيح أبي داود

“যেব্যক্তি ফজরহওয়ার পূর্বেরোযার নিয়্যত করেনিতার রোযা হবেনা।”[হাদিসটিআবু দাউদ(২৪৫৪) ও তিরমিযী (৭৩০) বর্ণনাকরেছেন এবংআলবানীসহীহ আবুদাউদ গ্রন্থেহাদিসটিকেসহীহ বলেচিহ্নিতকরেছেন।]এই ব্যক্তিযদি সফর করতেনা পারেন তারউচিতহবে এইমাসেরসম্মানার্থেদিনেরঅবশিষ্টাংশরোযাভঙ্গকারী সকলবিষয় (মুফাত্তিরাত)থেকে বিরতথাকা। কারণতিনি শরিয়ত অনুমোদিতওজর (অজুহাত)ছাড়াইরোযা ভঙ্গকরেছেন।[আশ্‌-শারহআল-মুমত্বি(৬/২০৯)]

তাইপ্রশ্নকারীরউচিত আল্লাহরকাছে আন্তরিকভাবেমাফ চাওয়া এবং তিনি যাকরেছেন তাথেকে তওবা করাএবং সেইদিনের রোযাকাযা করা।

আল্লাহই সবচেয়েভালো জানেন।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android