যদি নারীর (জরায়ু থেকে) অনেক বেশি রক্তপাত হয় তথা সে ইস্তেহাযাগ্রস্ত হয় তাহলে কীভাবে নামায পড়বে?
ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর অবস্থাসমূহ
প্রশ্ন: 68818
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর তিন অবস্থা:
প্রথম অবস্থা:
ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তার হায়েযের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকা। এক্ষেত্রে তিনি তার পূর্বজ্ঞাত হায়েযের সময়সীমাকে ধর্তব্য ধরবেন। এ সময়সীমাতে তিনি নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবেন। এ দিনগুলোর ক্ষেত্রে হায়েযের বিধান সাব্যস্ত হবে। আর এর অতিরিক্ত দিনগুলো ইস্তেহাযার দিন। এ দিনগুলোর ক্ষেত্রে ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর হুকুম কার্যকর হবে।
এর উদাহরণ হলো: কোনো নারীর প্রতি মাসের শুরুতে ছয়দিন হায়েয হত। তারপর হঠাৎ ইস্তেহাযা হয়ে অনবরত রক্তপাত হতে লাগল। এক্ষেত্রে তার হায়েয হবে প্রত্যেক মাসের প্রথম ছয়দিন। আর বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা। কারণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন: ফাতেমা বিনতে আবি হুবাইশ বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি ইস্তেহাযাগ্রস্ত হই। তারপর আর পবিত্র হই না। আমি কি নামায ছেড়ে দিব?” তিনি বলেন: সেটি শিরা (থেকে রক্তক্ষরণ)। কিন্তু তোমার যতদিন হায়েয হত ততদিন তুমি নামায ত্যাগ করবে। এরপর গোসল করবে এবং নামায পড়বে।”[হাদীসটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন]। আর সহীহ মুসলিমে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হাবীবাকে বলেন: “পূর্বে তোমার হায়েয যত দিন তোমাকে বিরত রাখত সে ততদিন তুমি বিরতি নিবে। অতঃপর গোসল করবে এবং নামায পড়বে।”
পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে যে ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীর হায়েযের নির্ধারিত সময় আছে সে হায়েযের সময়টুকু হায়েয হিসেবে পালন করবে। তারপর গোসল করে নামায পড়বে এবং রক্তপাতের দিকে ভ্রূক্ষেপ করবে না।
দ্বিতীয় অবস্থা:
ইস্তেহাযাগ্রস্ত হওয়ার আগে তার হায়েযের নির্ধারিত সময় না থাকা। অর্থাৎ প্রথমবার রক্ত দেখার পর থেকেই তার ইস্তেহাযা চলমান হওয়া। এক্ষেত্রে সে রক্তের ধরন আলাদা করবে। কালো রং কিংবা ঘনত্ব কিংবা দুর্গন্ধ যে রক্তে থাকবে সেটা হায়েযের রক্ত। সেটার ক্ষেত্রে হায়েযের হুকুম প্রযোজ্য হবে। আর যে রক্ত এমন নয় সেটা ইস্তেহাযার রক্ত। সেটার ক্ষেত্রে ইস্তেহাযার হুকুম প্রযোজ্য হবে।
উদাহরণস্বরূপ: কোনো নারী প্রথমবার রক্ত দেখল এবং এ রক্ত চলমান থাকল। কিন্তু দশদিন দেখল রক্ত কালো; আর মাসের বাকি সময় দেখল লাল রক্ত। কিংবা দশদিন দেখল ঘন রক্ত; আর বাকি সময় দেখল পাতলা রক্ত। কিংবা দশদিন হায়েযের দুর্গন্ধ পেল; আর মাসের বাকি দিনগুলো দুর্গন্ধ পেল না। সুতরাং প্রথম উদাহরণে কালো রক্ত তার হায়েয। দ্বিতীয় উদাহরণে ঘন রক্ত তার হায়েয। আর তৃতীয় উদাহরণে দুর্গন্ধযুক্ত রক্ত তার হায়েয। এর বাহিরে সব ইস্তেহাযা। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা বিনতে আবী হুবাইশকে বলেন, “যদি হায়েযের রক্ত হয় সেটা কালো; যা চেনা যায়। যদি সে রকম হয় তাহলে নামায থেকে বিরত থাকবে। আর যদি অন্যরকম রক্ত হয় তাহলে ওযু করে নামায আদায় করবে। কারণ সেটা শিরা (থেকে রক্তক্ষরণ)।” [হাদীসটি আবু দাউদ ও নাসাঈ বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। যদিও হাদীসটির সনদ ও মতন নিয়ে আপত্তি আছে তদুপরি আলেমসমাজ এর উপর আমল করেছেন। অধিকাংশ নারীর অভ্যাসের উপর ছেড়ে দেওয়ার চাইতে এর ওপর আমল করা উত্তম।]
তৃতীয় অবস্থা:
যার নির্দিষ্ট অভ্যাস নেই। আবার হায়েযকে ইস্তেহাযা থেকে পৃথক করার বিশেষ আলামতও নেই। অর্থাৎ প্রথম রক্ত দেখার পর থেকে সবসময় রক্ত এক রকম থাকে কিংবা নানান রকম থাকে যেটা হায়েয হতে পারে না। এ ধরণের নারী অধিকাংশ নারীদের অভ্যাস অনুযায়ী আমল করবে। সুতরাং তার হায়েয হবে প্রতি মাসে ছয় দিন বা সাত দিন। প্রথম যখন রক্ত দেখবে তখন থেকে সময় শুরু হবে। আর বাকি দিনগুলো ইস্তেহাযা।
উদাহরণস্বরূপ: মাসের পঞ্চম দিন তিনি রক্ত দেখলেন। এরপর রক্তপাত চলতে থাকল। কোনোভাবে সেটাকে হায়েয হিসেবে চিহ্ণিত করা গেল না। না রঙের মাধ্যমে, আর না অন্য কোনো মাধ্যমে। অতএব, এমন নারীর হায়েয হবে প্রতি মাসে ছয় দিন বা সাত দিন। যার সূচনা হবে মাসের পঞ্চম দিন থেকে। এর দলিল হামনা বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস; তিনি বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল! আমার খুব বেশি পরিমাণে দীর্ঘ সময় নিয়ে ইস্তেহাযার রক্তপাত হয়। আপনি কী মনে করেন: এটি আমাকে নামায-রোযা থেকে বিরত রাখবে। তিনি বললেন: আমি তোমাকে একটি সুতি কাপড় ব্যবহারের পদ্ধতি বলে দিচ্ছি। তুমি কাপড়টিকে গুপ্তাঙ্গের ওপর রাখবে। এটি রক্তক্ষরণ রোধ করবে। হামনাহ বললেন: রক্ত এর চেয়ে বেশি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: এটি শয়তানের লাথির আঘাত। অতএব, তুমি ছয় অথবা সাত দিন হায়েয গণনা করবে; যা আল্লাহর জ্ঞানে আছে। তারপর গোসল করবে। যখন দেখবে তুমি পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন হয়েছ ও পবিত্র হয়েছ তখন তেইশ দিন বা চব্বিশ দিন নামায পড়বে ও রোযা রাখবে।”[হাদীসটি আহমদ, আবু দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। আহমদ থেকে বর্ণিত আছে যে তিনিও হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন এবং বুখারী থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি হাদীসটি হাসান বলেছেন।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য: ‘ছয় দিন অথবা সাত দিন’ এটি পছন্দ করার এখতিয়ারের দেয়া নয়; বরং ইজতিহাদ (বিবেক-বিবেচনা খাটানো)-এর জন্য। অর্থাৎ সেই নারী দেখবেন যে, তার শারীরিক গঠন, বয়স ও আত্মীয়তার বিবেচনা থেকে কোন নারী তার কাছাকাছি এবং হায়েযের রক্তের বৈশিষ্ট্যের বিবেচনা ও অন্যান্য বিবেচনা থেকে কোনটি অধিকতর নিকটবর্তী। যদি দেখে ছয়দিন নিকটবর্তী তাহলে ছয়দিনকে হায়েয গণ্য করবে। আর যদি সাতদিন নিকটবর্তী হয় তাহলে সাতদিনকে হায়েয গণ্য করবে।[সমাপ্ত][শাইখ ইবনে উছাইমীনের “রিসালাতুন ফিদ দিমায়িত তাবিঈয়্যাতি লিন্নিসা”]
যে সময়ের রক্তকে হায়েযের রক্ত বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে সে সময়টাতে তিনি হায়েযগ্রস্ত। আর যে সময়ে হায়েয শেষ হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে সে সময়ে তিনি পবিত্র। তথা নামায পড়বেন, রোযা রাখবেন এবং স্বামী তার সাথে সহবাস করতে পারবে।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব