সূরা বুরুজের ২২ নং আয়াত فِي لَوْحٍ مَحْفُوظ (অর্থ-লাওহে মাহফুযে তথা সুরক্ষিত ফলকে রয়েছে) এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বড় বড় আলেমের তাফসীরসহ জানতে চাই। যেমন- ইবনে কাছির বা তাবারী।
‘লাওহে মাহফুয’ বলতে কি বুঝায়? এর অর্থ কি?
প্রশ্ন: 7002
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
ইবনে মানযুর বলেন:
لوح (লাওহ): “কাঠের প্রশস্ত যে কোন পৃষ্ঠকে লাওহ বলে।”
আযহারি বলেন: কাঠের পৃষ্ঠকে লাওহ বলা হয়। কাঁধের হাড়ের ওপর যদি কিছু লেখা হয় সেটাকেও লাওহ বলা হয়।
যেটার উপর কিছু লেখা হয় সেটাই লাওহ।
اللوح দ্বারা উদ্দেশ্য- اللوح المحفوظ (সুরক্ষিত ফলক)। যেমনটি আয়াতে কারীমাতে এসেছে فِي لَوْحٍ مَحْفُوظ (অর্থ- সুরক্ষিত ফলকে রয়েছে)। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলার ইচ্ছাসমূহের সংরক্ষণাগার।
প্রত্যেক প্রশস্ত হাড্ডিকে লাওহ বলা হয়।
শব্দটির বহুবচন হচ্ছে- ألواح
আর ألاويح হচ্ছে-جمع الجمع (বহুবচনের বহুবচন)।
দুই:
ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
فِي لَوْحٍ مَحْفُوظ (অর্থ-লাওহে মাহফুযে তথা সুরক্ষিত ফলকে রয়েছে): অর্থাৎ এটি উচ্চ পরিষদ কর্তৃক সংযোজন, বিয়োজন, বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে সংরক্ষিত।[তাফসিরে ইবনে কাছির (৪/৪৯৭, ৪৯৮]
তিন:
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
আল্লাহ্র বাণী: مَحْفُوظ (সংরক্ষিত): অধিকাংশ ক্বারীগণ শব্দটিকে لوح শব্দের صفة হিসেবে جَرّ দিয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, শয়তানদের পক্ষে কুরআন নিয়ে অবতীর্ণ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কুরআন যে স্থানে রয়েছে সে স্থানটি শয়তান সেখানে পৌঁছা থেকে সংরক্ষিত। এবং কুরআন নিজেও সংরক্ষিত; কোন শয়তান এতে সংযোজন-বিয়োজন করার ক্ষমতা রাখে না।
তাইতো আল্লাহ্ তাআলা তাঁর বাণীতে কুরআনকে সংরক্ষিত উল্লেখ করেছেন: “নিশ্চয় আমরা স্মরণিকাটি নাযিল করেছি। নিশ্চয় আমরা এর হেফাযতকারী”।[সূরা হিজর, আয়াত: ০৯] আর এ সূরাতে আল্লাহ্ তাআলা কুরআনে কারীম যে স্থানে রয়েছে সে স্থানকেও সংরক্ষিত উল্লেখ করেছেন।
এভাবে আল্লাহ্ তাআলা কুরআন যে আধারে রয়েছে সে আধার সংরক্ষণ করেছেন এবং কুরআনকেও যাবতীয় সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের শব্দাবলি যেভাবে হেফাযত করেছেন অনুরূপভাবে কুরআনের অর্থকেও বিকৃতি থেকে হেফাযত করেছেন। কুরআনের কল্যাণে এমন কিছু ব্যক্তিকে নিয়োজিত করেছেন যারা কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি ছাড়া কুরআনের হরফগুলো মুখস্ত রাখে এবং এমন কিছু ব্যক্তি নিয়োজিত করেছেন যারা কুরআনের অর্থকে বিকৃতি ও পরিবর্তন থেকে হেফাযত করে।”[দেখুন: আত-তিবইয়ান ফি আকসামিল কুরআন, পৃষ্ঠা-৬২]
চার:
কিছু কিছু তাফসিরে এসেছে যে, ‘লওহে মাহফুয’ হচ্ছে- ইস্রাফিলের কপালে; অথবা সবুজ রঙের মণি দিয়ে তৈরী এক প্রকার সৃষ্টি; কিংবা এ জাতীয় অন্যান্য ব্যাখ্যা— এসব বক্তব্য সাব্যস্ত নয়। এটি অদৃশ্যের বিষয়। যার কাছে ওহী আসত তিনি ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে গায়েব বা অদৃশ্যের ব্যাপারে কোন তথ্য গ্রহণ করা যাবে না।
আল্লাহ্ই ভাল জানেন।
সূত্র:
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ