একজন মুসলমান তার ক্যাথলিক স্ত্রীকে নিজ ধর্মের ধর্মীয় উৎসব পালন করতে দিবে না কেন? সে নারী মুসলমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে এবং নিজ বিশ্বাসের উপর অটুট আছে। সে কি তার বিশ্বাসের ভিত্তিতে উপাসনা করতে পারবে না?
মুসলিম স্বামী কর্তৃক অমুসলিম স্ত্রীকে তার ধর্মীয় উৎসব উদযাপনে বাধাদান
Soru: 70177
Allah'a hamdolsun ve peygamberine ve ailesine salat ve selam olsun.
আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)। যদি কোন খ্রিস্টান মেয়ে মুসলমান ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি হয় তার কয়েকটি বিষয় জানা থাকা উচিত:
১- স্ত্রী তার স্বামীর আনুগত্য করতে আদিষ্ট, গুনাহর ক্ষেত্র ছাড়া অন্য সকল ক্ষেত্রে। সে স্ত্রী মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক। যদি স্বামী গুনাহ নয় এমন কোন আদেশ করে তাহলে তাকে সেটা মানতে হবে। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে সে অধিকার দিয়েছেন। যেহেতু স্বামী পরিবারের কর্তা ও দায়িত্বশীল। পারিবারিক জীবন যাপন সম্ভবপর হবে না যদি পরিবারের কেউ একজনকে কর্তা মেনে তার নির্দেশমতো চলা না হয়। এর অর্থ এ নয় যে, স্বামী চৌকিদার সেজে, এ কর্তৃত্বকে ব্যবহার করে স্ত্রী বা সন্তানদের কষ্ট দিবে। বরং তিনি তাদের কল্যাণের চেষ্টা করবেন। উপদেশ দিবেন, পরামর্শ করবেন। তবে জীবনে চলতে গেলে কখনো কখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং সেটা মেনে যেতে হয়। খ্রিস্টান মেয়েকে কোন মুসলমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে এ মূলনীতিটি বুঝতে হবে।
২- ইসলাম খ্রিস্টান ও ইহুদী নারীকে বিয়ে করা জায়েয করেছে। এর মানে— সে নারী বিয়ের পর তার ধর্মের উপর অটুট থাকতে পারবে। সুতরাং স্বামীর এ অধিকার নেই যে, স্বামী তাকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করবে কিংবা তার নিজস্ব উপাসনা পালনে বাধা দিবে। তবে স্বামী নিজ স্ত্রীকে ঘর থেকে বের হতে না দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করবে। এমনকি সেটা যদি গির্জাতে যাওয়ার জন্যে হয় সে ক্ষেত্রেও। কারণ স্ত্রী স্বামীর আনুগত্য করার জন্য আদিষ্ট। ঘরের মধ্যে গর্হিত কিছু করা থেকে স্ত্রীকে নিবৃত রাখার অধিকার স্বামীর থাকবে; যেমন- মূর্তি টানাতে বাধা দেয়া, ঘণ্টা বাজাতে বাধা দেয়া। এর মধ্যে রয়েছে- বিদআতি উৎসবগুলো উদযাপন; যেমন- ইস্টার পালনে বাধা দেয়া। কারণ ইস্টার পালন ইসলামে দুইটি কারণে গর্হিত: এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি উপাসনা- যেমন ঈদে মিলাদুন্নবী বা মা দিবস ভিত্তিহীন। অন্যদিকে এর ভিত্তি হচ্ছে- কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস; যেমন- ঈসা (আঃ) কে হত্যা করা হয়েছে, শূলে চড়ানো হয়েছে, কবরে প্রবেশ করানো হয়েছে; এরপর তিনি কবর থেকে উঠেছেন। বাস্তব সত্য হচ্ছে- ঈসা (আঃ) নিহত হননি, তাঁকে শূলে চড়ানো হননি। বরঞ্চ তাঁকে জীবিত অবস্থায় আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আরও জানতে 10277 ও 43148 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন। স্বামীর এই অধিকার নেই যে, খ্রিস্টান স্ত্রীকে তার এই বিশ্বাস পরিহারে বাধ্য করবে। কিন্তু স্বামী গর্হিত কিছুর প্রচার করা ও জাহির করার বিরোধিতা করতে পারে। তাই খ্রিস্টান স্ত্রীর তার ধর্মের উপর টিকে থাকা ও স্বামীর গৃহে গর্হিত বিষয়াদি জাহির করা— এ দুটোর মধ্যে পার্থক্য করতে হবে। এর উদাহরণ হচ্ছে— স্ত্রী যদি মুসলিম হয় এবং সে কোন একটি বিষয়কে ‘মুবাহ’ বা বৈধ বিশ্বাস করে; কিন্তু ঐ বিষয়কে স্বামী ‘হারাম’ হিসেবে বিশ্বাস করে সে ক্ষেত্রে স্বামীর এই অধিকার থাকবে স্ত্রীকে ঐ বিষয় থেকে বাধা দিবে। যেহেতু স্বামী হচ্ছে—পরিবারের কর্তা। তাই স্বামী যেটাকে গর্হিত বিশ্বাস করবে সেটাতে বাধা দিতে পারে। ৩- অধিকাংশ আলেমের মতে, কাফেরেরা ঈমান আনার প্রতি যেমন আদিষ্ট; তেমনি শরিয়তের শাখা-বিধানগুলো মানতেও আদিষ্ট। এর মানে—মুসলমানদের জন্য যা কিছু হারাম তাদের জন্যেও সেসব কিছু হারাম; যেমন- মদপান, শুকরের গোশত ভক্ষণ, বিদআত চালুকরণ ও বিদআতী অনুষ্ঠান উদযাপন। স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে- স্ত্রীকে এ ধরনের কিছু করা থেকে বাধা দেয়া। যেহেতু- আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে বাঁচাও। যে আগুনের ইন্ধন হচ্ছে- মানুষ ও পাথর।”[সূরা আল-তাহরীম, আয়াত: ৬] এ বিধানের আওতার বাইরে থাকবে স্ত্রীর বিশ্বাস ও তার ধর্মে অনুমোদিত উপাসনাসমূহ; যেমন খ্রিস্টানদের নামায ও তাদের ধর্মে অবশ্য পালনীয় রোজা; স্বামী স্ত্রীকে এসব পালন করা থেকে বারণ করতে পারবে না। মদপান, শুকর খাওয়া, পাদ্রী ও পুরোহিতগণ কর্তৃক নবপ্রচলিত বিভিন্ন উৎসব পালন করা— তার ধর্মে তথা খ্রিস্টান ধর্মে নেই।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: “স্বামী তার স্ত্রীকে গির্জা বা সিনাগগে যেতে বাধা দেয়ার অধিকার সংরক্ষণ করবেন।” যে ব্যক্তির খ্রিস্টান স্ত্রী রয়েছে তার ব্যাপারে ইমাম আহমাদ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন: “খ্রিস্টানদের উৎসব বা গির্জাতে যাওয়ার অনুমতি দিবে না।” যে ব্যক্তির খ্রিস্টান দাসী রয়েছে সে যদি খ্রিস্টানদের উৎসবে বা গির্জাতে কিংবা সমাবেশে যাওয়ার অনুমতি চায় তার ব্যাপারে তিনি বলেন: “তাকে অনুমতি দিবে না।” ইবনুল কাইয়্যেম বলেন: “এ অনুমতি না দেয়ার কারণ হলো- কুফরের আহ্বায়ক ও কুফরের নিদর্শনবহনকারী কোন কিছুতে তাকে সহযোগিতা না করা।” তিনি আরও বলেন: “স্ত্রী তার ধর্মমতে যে রোজা রাখাকে আবশ্যকীয় বিশ্বাস করেন স্বামী স্ত্রীকে সে রোজা রাখতে বাধা দিতে পারবে না; যদিও এর ফলে স্ত্রীর রোজা রাখাকালীন সময়ে স্বামী তার সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। স্ত্রীকে নামায পড়তেও বাধা দিতে পারবে না; যদিও স্ত্রী স্বামীর ঘরেই পূর্বদিকে ফিরে নামায আদায় করবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধিদেরকে মসজিদে নববীতে তাদের কিবলার দিকে ফিরে নামায আদায় করার সুযোগ করে দিয়েছেন।[আহকামু আহলুয যিম্মাহ (২/৮১৯-৮২৩]
মসজিদে নববীতে নাজরানের খ্রিস্টান প্রতিনিধির নামায পড়ার বিষয়টি ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থ (৩/৬২৯) এ উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থটির মুহাক্কিক (পাঠোদ্ধারকারী) লিখেছেন: “এ রেওয়ায়েতটির বর্ণনাকারীগণ ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য); কিন্তু সনদ মুনকাতি (বিচ্ছিন্ন)। অর্থাৎ সনদ দূর্বল”। আরও দেখুন 3320 নং প্রশ্ন। আল্লাহই ভাল জানেন।
Kaynak:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব