আমি একটি অমুসলিম দেশে প্রবাসী। এখানে আমার ছোট একটি রেস্টুরেন্ট আছে। মুসলিমদের মধ্যে কিছু কিছু বে-রোজদার (তাদের সংখ্যা অনেক) দুপুর বেলায় আমার রেস্টুরেন্টে খেতে চায়। এ সকল বে-রোজদার ও অমুসলিমদের নিকট খাবার বিক্রি করার হুকুম কি ?
রেস্টুরেন্ট মালিকের জন্য রমজানের দিনের বেলায় বে-রোজদার লোক ও অমুসলিমদের নিকট খাবার বিক্রি করা জায়েয কি?
প্রশ্ন: 78494
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এক:
ইতিপূর্বে এইওয়েবসাইটেপ্রকাশিত অনেকগুলোপ্রশ্নোত্তরেকুফরি-রাষ্ট্রেবসবাসেরব্যাপারেসাবধানকরাহয়েছে।কারণ এতে করেব্যক্তির নিজেরওতার পরিবারের দ্বীনদারি হুমকির সম্মুখীন হয়;ব্যক্তিতারসন্তানদেরকেআশানুরূপভাবেইসলামীশিক্ষায়শিক্ষিতকরতেপারে না।চাকুরীর সুলভতার কারণে কুফরি রাষ্ট্রে অবস্থান করা-গ্রহণযোগ্য অজুহাত নয়। আরও জানতে পড়ুন (38284) ও(13363) নংপ্রশ্নেরউত্তর।
দুই:
এবার আপনার প্রশ্নের প্রসঙ্গে আসা যাক। জেনেরাখুন,রমজানমাসেরদিনেরবেলায়কাউকেখাবারখেতেদেয়াআপনারজন্যজায়েয নয়।তবেসে ব্যক্তির রোজা-ভঙ্গ করার শরিয়তসম্মত কোনওজর থাকলে; যেমনঅসুস্থহলেবামুসাফির হলে ভিন্ন কথা। এইহুকুমেরক্ষেত্রে মুসলিমওকাফেরের মাঝে কোন তফাৎ নেই। বে-রোজদারমুসলিমরোযাররাখার জন্যআদিষ্ট।রোজাভঙ্গ করারকারণেসে গুনাহগারহবে।রমজানমাসেরদিনেরবেলায়তাকেপানাহার করতে দেয়ার মানে গুনাহওসীমালঙ্ঘনের কাজেতাকে সহযোগিতা করা। অনুরূপভাবে কাফের ব্যক্তিওসিয়াম পালনওসমস্ত ইসলামী অনুশাসন পালন করার ব্যাপারেআদিষ্ট। তবেআমলেরআগেতাকেদুই সাক্ষ্যবাণী (শাহাদা)উচ্চারণ করেইসলামেপ্রবেশকরতেহবে।কেয়ামতেরদিন কাফেরকেতারকুফুরিরকারণে যেমনশাস্তি দেয়াহবে তেমনিভাবেইসলামীশরিয়তেরঅন্যান্যঅনুশাসনগুলো পালন নাকরারকারণেওশাস্তি দেয়াহবে। এতেকরেজাহান্নামেতারশাস্তি অনেক বেড়ে যাবে।
ইমামনববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,সঠিকমতহলো-যেমতের পক্ষেমুহাক্বিক (সূক্ষ্ম বিশ্লেষক)ওঅধিকাংশ আলেম রয়েছেন-“কাফেরেরাশরিয়তেরশাখা-বিষয়সমূহেরওব্যাপারেআদিষ্ট। মুসলমানদের উপর যেমন রেশম হারামতেমনিভাবেকাফেরদেরউপরেওতাহারাম।”সমাপ্ত [শরহে মুসলিম (১৪/৩৯)] শাইখমুহাম্মাদইবনেসালেহআল-উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহকেপ্রশ্নকরাহয়েছিল: কাফের তো শরয়ি বিধিবিধান পালনের জন্য আদিষ্ট নয়; তাহলে কিভাবেকেয়ামতের দিন কাফেরের বিচার করা হবে?
তিনি উত্তরে বলেন:
এ প্রশ্নটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তিতে করা হয়েছে যে দৃষ্টিভঙ্গিটি সঠিক নয়। কারণ একজন মুমিন যা যা করার জন্য আদিষ্ট একজন কাফেরও তা তা করার জন্য আদিষ্ট। তবেদুনিয়াতে কাফেরকে বাধ্য করা হচ্ছে না। কাফের যে, শরয়ি বিধিবিধান পালনের জন্য আদিষ্ট এর দলীল হচ্ছে- আল্লাহ তাআলার বাণী:
( إلاأصحاباليمين .فيجناتيتساءلون .عنالمجرمين .ماسلككمفيسقر .قالوالمنكمنالمصلين .ولمنكنطعمالمسكين .وكنانخوضمعالخائضين .وكنانكذببيومالدين )
(৩৯)কিন্তু ডানদিকস্থরা, (৪০) তারা থাকবে জান্নাতে এবং পরস্পরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। (৪১) অপরাধীদের সম্পর্কে (৪২) বলবেঃ তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নীত করেছে? (৪৩) তারা বলবেঃ আমরা নামায পড়তাম না, (৪৪) অভাবগ্রস্তকে আহার দিতাম না, (৪৫) আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম। (৪৬) এবং আমরা প্রতিফল দিবসকে অস্বীকার করতাম।[৭৪ আল-মুদ্দাসসির: ৩৯-৪৬] যদিনামায ত্যাগওমিসকীনদেরকেখাওয়ানোত্যাগকরারকারণেতারাশাস্তিপ্রাপ্তনাহতোতাহলে তারা প্রশ্নের জবাবে সে বিষয়গুলো উল্লেখকরতনা।কারণ সে অবস্থায় এগুলো উল্লেখ করা নিরর্থক।অতএব, এটাই দলীল যে, ইসলামের শাখা-বিষয়সমূহ ত্যাগ করার কারণে তারাশাস্তিপ্রাপ্তহবে।এ বিষয়টিনকলি দলীলদ্বারাযেমন প্রমাণিত, তেমনিযুক্তিরমাধ্যমেওপ্রমাণিত। আল্লাহযদিতাঁরমুমিনবান্দাকেতাঁরদ্বীনেরকোনএকটি ওয়াজিবদায়িত্ব পালনে ত্রুটিহওয়ারকারণেশাস্তিদেন, তবেকাফেরকেকেন শাস্তিদিবেননা? বরংআমিআরেকটুযোগকরে বলতেপারিযে,আল্লাহ কাফেরকে খাদ্য-পানীয়ইত্যাদিযতনেয়ামত দিচ্ছেনসেসবেরজন্যেও তাকেশাস্তি দিবেন। আল্লাহ তাআলাবলেন:
( ليسعلىالذينآمنواوعملواالصالحاتجناحفيماطعمواإذامااتقواوآمنواوعملواالصالحاتثماتقواوآمنواثماتقواوأحسنواواللهيحبالمحسنين )
“যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা পূর্বে যাভক্ষণ করেছে, সে জন্য তাদের কোন গুনাহ নেই যখন ভবিষ্যতের জন্যে সংযতহয়েছে, ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। এরপর সংযত থাকে এবংঈমান রাখে। এরপর সংযত থাকে এবং সৎকর্ম করে। আল্লাহ সৎকর্মীদেরকেভালবাসেন।”[৫ আল-মায়েদা : ৯৩]এইআয়াতের মানতুক (প্রত্যক্ষ ভাব) হচ্ছে- মুমিনগণযাআহারকরেছেসেব্যাপারেতাদেরগুনাহমাফহয়েযাবে। আরআয়াতেরমাফহুম (পরোক্ষ ভাব) হচ্ছে-কাফেরেরাযাআহারকরেছেসেব্যাপারেতাদের গুনাহহবে।”সমাপ্ত [মাজমূফাত্ওয়াশ-শাইখইবনে উছাইমীন (শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (২/ প্রশ্ননং১৬৪) ]
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলাযায়- রমজানমাসেরদিনেরবেলায়কোনঅমুসলিমকেখাবারপরিবেশনকরাকোনমুসলিমেরজন্যজায়েয নয়। কারণকাফেররা শরিয়তের শাখাগতবিষয়সমূহ পালনেরব্যাপারেআদিষ্ট। “নিহায়াতুলমুহতাজ”(৫/২৭৪) গ্রন্থে আলেমগণহতেউল্লেখ করা হয়েছেযেতাঁরারমজান মাসেরদিনেরবেলায়কাফেরদেরকাছেখাবারবিক্রিকরাহারামসাব্যস্তকরেছেন। আরো জানতে পড়ুন (49694) নংপ্রশ্নেরউত্তর। আল্লাহইসবচেয়েভালজানেন।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব