প্রশ্ন: যে কারাবন্দী মাটির নীচে অন্ধকার সেলে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রয়েছে, নামাযের সময় জানার তার কোন সুযোগ নেই, রমজান মাস কখন শুরু হবে সে সম্পর্কে তার কাছে কোন তথ্য নেই সে কিভাবে নামায ও রোজা আদায় করবে?
যে কারাবন্দীর সময় জানার সুযোগ নেই তার নামায ও রোজা
প্রশ্ন: 81421
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
সমস্তপ্রশংসাআল্লাহরজন্য।
এক:
আমরাআল্লাহতাআলার কাছেপ্রার্থনাকরছি তিনি যেনসকল মুসলিমবন্দীরআশুমুক্তিরব্যবস্থা করেদেন, নিজকরুণায়তাদেরকেধৈর্য্য-শক্তিও সান্ত্বনাদান করেন,তাদের অন্তরগুলোআত্মপ্রশান্তিও একীনদিয়েভরপুরকরে দেনএবং মুসলিমউম্মাহকেসঠিক পথেরদিশাদেনযে পথেতাঁর প্রিয়ভাজনগণ(আউলিয়াগণ)সম্মানিতহবেন এবংতাঁর শত্রুরা লাঞ্ছিতহবে।
দুই:
আলেমগণএইসিদ্ধান্তেউপনীত হয়েছেনযে,আটকও কারাবন্দী ব্যক্তিসালাত ওসিয়াম এরদায়িত্ব থেকেঅব্যাহতিপাবে না।বরং তাদের উপরফরজ হলসময় নির্ধারণেযথাসাধ্যচেষ্টা করা।যদি নামাযেরসময়শুরু হয়েছে মর্মেপ্রবল ধারণাহয়,তবে তিনিসালাতআদায় করেনিবেন।অনুরূপভাবেরমজান মাসশুরু হয়েছে মর্মেতার প্রবল ধারণাহলে তিনিরোজাপালন করবেন।খাবারেরসময়গুলোখেয়াল করে অথবা কারাগারেরলোকদের জিজ্ঞেসকরে তিনিসময় নির্ধারণকরতে পারেন।তিনি যদি সালাতও সিয়ামেরসঠিক সময়জানার জন্যযথাসাধ্যচেষ্টা করেন তবেতার ইবাদতসহিহ হবে ওএর মাধ্যমে তিনিদায়িত্বমুক্তহবেন;যদিও পরবর্তীতেতার কাছেপ্রকাশ পায়যে, তার ইবাদতযথাসময়ে আদায়হয়েছে অথবাযথাসময়ের পরেআদায় হয়েছেঅথবা কোনকিছুপ্রকাশ না হোক।এর দলিলহচ্ছে-আল্লাহ তাআলারবাণী:
( لاَيُكَلِّفُاللّهُنَفْساًإِلاَّوُسْعَهَا ) [2 البقرة : 286]
“আল্লাহকারো উপরতার সাধ্যেরঅতিরিক্তবোঝা চাপান না।”[ ২আল-বাক্বারাহ: ২৮৬ ]
এবং আল্লাহতাআলারবাণী:
( لَايُكَلِّفُاللَّهُنَفْساًإِلَّامَاآتَاهَا ) [65 الطلاق : 7]
“আল্লাহযাকে যেপরিমাণসামর্থ্যদান করেছেন এরঅতিরিক্তকোনো ভারতিনি তারউপর আরোপকরেন না।”[৬৫সূরা আত্ব-ত্বালাক্ব: ৭]
তবেপরে যদিজানতে পারেনযে,তিনিঈদের দিনগুলোতেরোজাছিলেনতবেসেরোজাগুলোকাযাকরা তার উপরওয়াজিব।কারণঈদেরদিনেররোজা সহিহনয়।যদিপরবর্তীতেতিনি নিশ্চিতভাবেজানতে পারেনযে, তিনিসঠিক সময়েরপূর্বে সালাতবা সিয়াম পালনকরেছেনতাহলে সেনামাযপুনরায় আদায়করা ওয়াজিব।
আল-মূসূআআল-ফিক্বহিয়্যাহ(২৮/৮৪-৮৫)গ্রন্থেরয়েছে:
“অধিকাংশফিকাহ-গবেষকেরমতে,যার কাছেমাসের হিসাবসুস্পষ্টনয়তিনিরমজানেররোজাপালনেরদায়িত্ব থেকেঅব্যাহতিপাবেন না।বরং রোজাপালন তারদায়িত্বেফরজহিসেবেথাকবে।যেহেতু তারউপর শরয়িদায়িত্বন্যস্তএবংতিনিশরয়ি নির্দেশেরআওতাভুক্ত।তিনিযদি নিজের বিচার-বুদ্ধিখাটিয়ে রমজানমাসনির্ধারণেযথাসাধ্যচেষ্টা করেরোজা রাখাশুরু করেন এক্ষেত্রেতার পাঁচটিঅবস্থা হতেপারে:
প্রথমঅবস্থা:
অস্পষ্টতাঅব্যাহত থাকাএবং সঠিকসময় তার নিকটপরিষ্ফুটনা হওয়া।তার রোজাকি রমজানমাসে পালিতহয়েছে, নাকি রমজানেরআগে পালিতহয়েছে, নাকিপরে পালিতহয়েছে এরকিছুই জানতেনা পারা –এ ক্ষেত্রেতার পালিতরোজারমাধ্যমে তারদায়িত্বখালাস হবে,তাকে পুনরায়রোজা রাখতেহবে না।যেহেতু তিনিসাধ্যানুযায়ীচেষ্টা করেছেন।অতএব, এর চেয়েবেশি কিছু তারদায়িত্বেবর্তাবে না।
দ্বিতীয়অবস্থা :
বন্দিব্যক্তির রোজারমজান মাসেপালিতহওয়া-এই রোজারমাধ্যমেতার দায়িত্বখালাস হবে।
তৃতীয়অবস্থা :
বন্দিব্যক্তির রোজাপালনরমজানেরপরে পালিতহওয়া-অধিকাংশফিক্বাহবিশেষজ্ঞগণেরমতে এইরোজা পালনেরমাধ্যমে তারদায়িত্বখালাসহবে।
চতুর্থঅবস্থা:
এরদু’টিদিক হতেপারে:
প্রথমদিক:তার রোজারমজানেরপূর্বে পালিতহওয়া এবংরমজান শুরুহওয়ার আগে তিনিতা জানতে পারা।এক্ষেত্রেরমজান মাসশুরু হলেতাকে রমজানেররোজা পালনকরতে হবে এব্যাপারেকোনো দ্বিমতনেই।কারণ নির্ধারিতসময়ে তাপালন করারসামর্থ্যতার রয়েছে।
দ্বিতীয়দিক: তার রোজারমজানেরপূর্বে পালিতহওয়া এবংরমজান শেষহওয়ার আগে তিনিতা জানতেনা পারা।এই রোজাপালন তার দায়িত্বখালাসের জন্যযথেষ্টহবে কিনা এইব্যাপারে দু’টি মতরয়েছে-
প্রথমমত: এইরোজা পালনতার দায়িত্বখালাসের জন্যযথেষ্ট হবেনা।বরং এর কাযাপালনকরা তার উপরওয়াজিব।এটি মালেকী,হাম্বলীমাযহাবেরঅভিমতএবং শাফেয়ীমাযহাবেরনির্ভরযোগ্যমতও এটি।
দ্বিতীয়মত: এই রোজাপালনরমজানের রোজাহিসেবেতার দায়িত্বখালাসের জন্যযথেষ্টহবে।যেমনিভাবেআরাফাতেরদিননির্ধারণেরব্যাপারে যদিসন্দেহ দেখাদেয় এবং হজ্জযাত্রীগণআরাফারদিনেরপূর্বেইআরাফাতেঅবস্থান নেনতবে তাদেরহজ্জ শুদ্ধহবে–এটি শাফেয়িমাযহাবেরকিছু কিছুআলেমের অভিমত।
পঞ্চমঅবস্থা:
“তারকিছু রোযারমজান মাসেএবং কিছুরোজারমজানের পরেপালিত হওয়া।যেরোজাগুলোরমজানমাসেঅথবারমজানেরপরে পালিত হয়েছেসেগুলোতারদায়িত্বখালাসেরজন্য যথেষ্টহবে। আরযে রোজাগুলোরমজানমাসেরআগেপালিতহয়েছে সেগুলোতার দায়িত্বখালাসের জন্য যথেষ্টজন্য হবে না।”সমাপ্ত
দেখুন-আল-মাজমূ(৩/৭২-৭৩), আল-মুগনী(৩/৯৬)
আল্লাহইসবচেয়েভালো জানেন।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব