জ্যোতিষিদের কাছে আসা এবং তারা যা বলে তাতে বিশ্বাস করা কি জায়েয? ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি তাদের কাছে আসবে ও তাদেরকে বিশ্বাস করবে তাদের নামায কবুল হবে না— এটা কি সহিহ? এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে এবং আলেমগণ যা বলেছেন সে বিষয়গুলো আমাদেরকে পরিস্কার করে বলুন।
জ্যোতিষিদের কাছে আসা ও তাদেরকে বিশ্বাস করার হুকুম
প্রশ্ন: 8291
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
তা হারাম হওয়ার ব্যাপারে অনেক হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: সাফিয়্যা বিনতে আবু উবাইদ এর হাদিস, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে এসে তাকে কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হবে না।”[সহিহ মুসলিম]
এবং ক্বাবিসা বিন আল-মুখারিক থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: العيافة ، والطيرة ، والطرق من الجبت (রেখা অঙ্কন করে ভাল-মন্দ নির্ণয় করা, কোন কিছুকে অশুভ লক্ষণ ভাবা এবং পাখি তাড়িয়ে শুভ-অশুভ নির্ণয় করা জাদুবিদ্যা বা মূর্তিপূজা)[আবু দাউদ হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন]
আবু দাউদ বলেন: العيافة হল: রেখা অঙ্কন। الطَّرْق হল: তাড়ানো। অর্থাৎ পাখিকে তাড়ানো। আর তা হলো কোন পাখির উড়ে যাওয়াকে শুভ লক্ষণ বা অশুভ লক্ষণ ভাবা। যদি পাখিটি ডানদিকে উড়ে যায় তাহলে শুভ ভাবা হয়। আর যদি পাখিটি বাম দিকে উড়ে যায় তাহলে অশুভ ভাবা হয়।
জাওহারী বলেন: الجِبْت শব্দটি মূর্তি, জ্যোতিষী, যাদুকর ও জ্যোর্তিবিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
এবং ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি জ্যোতিষবিদ্যার কোন জ্ঞান গ্রহণ করল সে জাদুবিদ্যার একটি অংশ গ্রহণ করল। এটি যত বেশি গ্রহণ করবে ওটি তত বেশি গ্রহণ করা হবে।”[আবু দাউদ সহিহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন]
এবং মুয়াবিআ’ বিন আল-হাকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম: “ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি জাহেলিয়াতকে সদ্য ত্যাগকারী (নও মুসলিম)। আল্লাহ্ (আমাদের জন্য) ইসলামকে নিয়ে এসেছেন। আমাদের মাঝে এমন কিছু মানুষ আছে যারা গণকদের কাছে আসে। তিনি বললেন: তাদের কাছে আসবে না। আমি বললাম: আমাদের মধ্যে কিছু লোক শাকুনবিদ্যা (পাখি দিয়ে ভবিষ্যত বলা) চর্চা করে। তিনি বললেন: এটি তাদের অন্তরে উদ্রেক হওয়া কিছু; তাদেরকে বিশ্বাস করবে না।”[সহিহ মুসলিম]
এবং আবু মাসউদ আল-বাদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুকুরের মূল্য, বেশ্যার উপার্জন, জ্যোতিষির পাওনা থেকে নিষেধ করেছেন।[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
এবং আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু মানুষ জ্যোতিষিদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: তারা কিছুই নয়। তারা (সাহাবীরা) বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তারা কখনও কখনও এমন কিছু বলে যা বাস্তবে ঘটে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: সেটি হচ্ছে কোন একটি সত্য কথা যা কোন এক জ্বিন ছিনিয়ে নিয়ে তার বন্ধুর কানে পৌঁছে দেয়। এরপর তারা এর সাথে একশটি মিথ্যা মিশ্রিত করে।[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে এসে তার কথায় বিশ্বাস করে কিংবা কোন নারীর গুহ্যদ্বারে সঙ্গম করে সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যা নাযিল হয়েছে তা থেকে মুক্ত।”[সুনানে আবু দাউদ]
আলেমগণ বলেন: এ বিষয়গুলো চর্চা করা, এগুলোর শরণাপন্ন হওয়া, এদেরকে বিশ্বাস করা, এদের জন্য সম্পদ খরচ করা হারাম। কোন ব্যক্তি যদি এমন কোন বিষয়ের ফিতনায় পড়ে যায় তাহলে তার উচিত অবিলম্বে তাওবা করা।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ফাতাওয়াল ইমাম নববী (২৩০)