0 / 0

সঞ্চিত সম্পদে যাকাতের বিধান কী?

السؤال: 93251

আমি বসবাসের করার জন্য এমন একটা ফ্ল্যাট কিনেছি, যেটা নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিস্তিতে বিক্রি হয়। আমি অগ্রিম কিছু পরিশোধ করেছি। আর ব্যাংকে ফ্ল্যাটের অবশিষ্ট মূল্য সঞ্চয় করে রেখেছি। এই সঞ্চিত সম্পদে কি যাকাত আবশ্যক হবে; নাকি হবে না? আর অগ্রিম যা পরিশোধ করলাম সেটার ক্ষেত্রে কী হবে?

الجواب

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وبعد.

যদি সম্পদে যাকাত আবশ্যক হওয়ার শর্তাবলি পাওয়া যায় অর্থাৎ নেসাব পরিমাণ হওয়া এবং বছর পূর্ণ হওয়া তাহলে তাতে যাকাত আবশ্যক হবে; যদিও এই সম্পদ সঞ্চয় করা হয় বিশেষ কোন প্রয়োজনে যেমন- আবাসন, শিক্ষা বা খরচাদি।

শাইখ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “আমি আমার প্রতি মাসের বেতন থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয় করি। আমার উপর কি এই সম্পদের যাকাত আবশ্যক হবে? উল্লেখ্য, আমি আমার একটা বাড়ি নির্মাণের জন্য এবং শীঘ্রই বিয়ে করার লক্ষ্যে মোহরানার ব্যবস্থা করার জন্য সম্পদ সঞ্চয় করছি। আরও উল্লেখ্য, আমি কয়েক বছর ধরে একটা ব্যাংকে এই সম্পদ সঞ্চয় করছি। কারণ এটা সঞ্চয় করার জন্য আমার ভিন্ন কোনো স্থান নেই।”

তিনি রাহিমাহুল্লাহ উত্তর দেন: “বিবাহ, বাড়ি নির্মাণ বা অন্য কোনো কাজে সঞ্চিত সম্পদে যাকাত আবশ্যক হবে যদি সেটা নেসাব পরিমাণ হয় এবং বর্ষপূর্তি ঘটে। হোক সেটা স্বর্ণ বা রৌপ্য বা কাগুজে মুদ্রা। কারণ (শরয়ী) দলীলগুলোর সার্বিক ভাব নেসাব পরিমাণ ও বর্ষপূর্তি হয় এমন সকল সম্পদকে অন্তর্ভুক্ত করেছে; কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া।

আর সুদী ব্যাংকে সম্পদ রাখা জায়েয নেই। কারণ এর মাধ্যমে সুদী ব্যাংককে পাপ ও সীমালঙ্ঘনে সাহায্য করা হয়। চূড়ান্ত জরুরী পরিস্থিতিতে যদি সুদী ব্যাংকে রাখতেই হয় তাহলে বৈধ হবে; কিন্তু কোন মুনাফা নেওয়া ছাড়া।”[‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ (১৪/১৩০) থেকে সমাপ্ত]

তাকে আরও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: “একজন মানুষ বিয়ে করার জন্য সম্পদ সঞ্চয় করছে সে কি যাকাত দেওয়া থেকে অব্যাহতি পাবে?”

তিনি উত্তর দেন: “বিয়ের নিয়ত করলেও তার উপর থেকে যাকাত মওকূফ হবে না। অনুরূপভাবে কেউ যদি ঋণ পরিশোধ করা, জমি কিনে ওয়াকফ করা কিংবা দাস কিনে মুক্ত করার লক্ষ্যে সম্পদ সঞ্চয় করে, তার ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে। বরং সবার উপরই যাকাত আদায় করা আবশ্যক যদি সঞ্চিত সম্পদের বছর পূর্ণ হয়। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু যাকাত আবশ্যক করেছেন, কিন্তু এমন উদ্দেশ্যগুলোকে যাকাত মওকূফকারী হিসেবে গণ্য করেননি। যাকাত সম্পদ বৃদ্ধি করে; হ্রাস করে না। যাকাত সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে, ব্যক্তিকেও পরিশুদ্ধ করে। যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু বলেছেন: “তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার জন্য তাদের সম্পদ থেকে সদকা (যাকাত) গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য দোয়া করো।”[সূরা তাওবাহ: ১০৩] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “কোন দান সম্পদের হ্রাস করে না।” [মুসলিম (২৫৮৮)][‘মাজমুউল ফাতাওয়া’ (১৪/১২৬)]

ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সংকলনে রয়েছে (৯/৩৮১):

“বাড়ী নির্মাণের জন্য সঞ্চয়কৃত সম্পদের যদি বছর পূর্ণ হয় এবং সেটা এককভাবে কিংবা অন্য কোনো যাকাতী সম্পদ তথা নগদ মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্যের সাথে যুক্ত করলে যদি নেসাব পরিমাণ হয়ে যায়, তাহলে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে।”[সমাপ্ত]

শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ অনুরূপ ফতোয়া দিয়েছেন। আমরা (41805) নং প্রশ্নোত্তরে তার ফতোয়া চয়ন করেছি।

আলেমদের অগ্রগণ্য মতানুযায়ী যে ব্যক্তির উপর ঋণ আছে তার সম্পদেও যাকাত ওয়াজিব হবে। অনুরূপভাবে যার দায়ে বিলম্বে পরিশোধযোগ্য বড় বড় কিস্তি আছে তার সম্পদেও যাকাত ওয়াজিব হবে। বিলম্বে পরিশোধযোগ্য ঋণ সঞ্চিত সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হওয়াকে বাতিল করবে না, যদি সম্পদ নেসাব পরিমাণ হয়। কারণ যাকাত এমন একটি ইবাদত যা যার হাতে সম্পদ আছে তার উপর আবশ্যক হয়— যাকাত প্রদানের নির্দেশসম্বলিত আয়াত ও হাদীসসমূহের ব্যাপকতার ভিত্তিতে। ইতঃপূর্বে 22426 নং প্রশ্নোত্তরে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সুতরাং প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, আপনার উপর ওয়াজিব হল সঞ্চিত সম্পদের যাকাত আদায় করা। আর বাড়ি কেনার জন্য আপনি অগ্রিম যা দিয়েছেন সেটার যাকাত আপনাকে দিতে হবে না। কারণ এটা বিক্রেতাকে দেওয়ার মাধ্যমে আপনার মালিকানা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।

আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

المصدر

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android