আমি এক কোম্পানীতে চাকুরী করি। কোম্পানী আমার দুই মাসের তথা সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের বেতন দিচ্ছে না। আমি কোম্পানীর মালিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন: যদি বেচাবিক্রি ও কাজ থাকে তাহলে তোমার বেতন দিব; যদি না থাকে তাহলে তুমি কিছু পাবে না? আমি বিবাহিত। আমার উপরে অনেক আর্থিক দায়িত্ব আছে, ঋণ আছে; যে ঋণের বোঝা আমার মেরুদণ্ড বাঁকা করে ফেলেছে।
এক:
মালিকের উচিত কর্মচারীদের অধিকারের ব্যাপারে আল্লাহ্কে ভয় করা এবং তাদের বেতন কোনরূপ কমতি না করে ও বিলম্ব না করে পরিশোধ করা। এটাই তার মাঝে ও তাদের চুক্তির দাবী।
ইতিপূর্বে আমরা 60407 নং প্রশ্নোত্তরে কিছু কিছু কোম্পনীর মালিক কর্তৃক কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে বিলম্ব করার জুলুমকে হারাম হিসেবে উল্লেখ করেছি।
আমরা এ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, যদি বেতন না দেওয়াটা সত্যি সত্যি কোম্পানীর কাছে নগদ অর্থ না থাকার অপারগতাবশতঃ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কোম্পানীর ওজর গ্রহণযোগ্য। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "যদি সে (ঋণ গ্রহণকারী) দরিদ্র হয়, তবে স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত অবকাশ দিবে। আর মাফ করে দেয়া তোমাদের পক্ষে অতি উত্তম; যদি তোমরা জানতে!"[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৮০]
আর যদি কোম্পানী অবহেলা ও তালবাহানা করে তাহলে সেটা জুলুম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "ধনী লোকের তালবাহানা জুলুম"।[সহিহ বুখারী (২৪০০) ও সহিহ মুসলিম (১৫৬৪)]
আরবী مطل (তালবাহানা) শব্দের অর্থ: কোন ওজর ব্যতিরেকে আবশ্যকীয় অধিকার দিতে বিলম্ব করা।
এ হাদিসটি প্রমাণ করে যে, যদি ধনী লোক তালবাহানা করে তাহলে সেটা জুলুম ও হারাম। আর যদি গরীব হয় কিংবা পরিশোধে অক্ষম হয় তাহলে সেটা জুলুম নয়; কিংবা হারাম নয়।
[ইমাম নববীর 'শারহে মুসলিম']
দুই:
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, যদি কোম্পানীর মালিকগণ তালবাহানাকারী হয়; অক্ষম না হয় সেক্ষেত্রে আপনার সামনে একাধিক সমাধান রয়েছে:
১. আপনি কোমল ভাষায় কোম্পানীর মালিককে নসিহত করতে পারেন। আশা করি এতে আল্লাহ্ তার অন্তরকে কোমল করে দিবেন এবং হকদারদের হক তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার দিশা তাকে দান করবেন। যদি কোম্পানীর মালিক চায় না যে, কর্মচারীগণ তার অধিকার নষ্ট করুক বা কাজে অবহেলা করুক তাহলে তারও তো উচিত মানুষের সাথে সে রকম আচরণ করা যে রকম আচরণ তারা পেতে পছন্দ করে। তার উচিত তাদের উপর জুলুম না করা এবং তাদের অধিকার প্রদানে অবহেলা না করা।
২. আপনি এই জুলুমের উপর ধৈর্য ধরতে পারেন যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ্ আপনার জন্য সহজ করে দেন এবং আপনি পরিপূর্ণভাবে আপনার অধিকার বুঝে নিতে পারেন।
৩. আপনার বিষয়টি শরিয়া কোর্টে উত্থাপন করতে পারেন কিংবা লেবার কোর্টে পেশ করতে পারেন; যাতে করে আপনি আপনার অধিকার বুঝে নিতে পারেন।
৪. আপনি এ কোম্পানী থেকে ইস্তফা দিয়ে অন্য কোন চাকুরী খুঁজতে পারেন।
৫. এ সবকিছুর আগে আপনি আল্লাহ্র কাছে দোয়া করুন এবং প্রার্থনা করুন আল্লাহ্ যেন আপনার জন্য সহজ করে দেন, আপনার মালিককে হেদায়েত দেন এবং তার অন্তরকে নরম করে দেন।
আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা।