ইন্টারনেট থেকে কাটছাট করে প্রস্তুতকৃত এসাইনমেন্টগুলো ছাত্রদের কাছে বিক্রি করার হুকুম কি; যাতে করে ছাত্ররা সেগুলো তাদের শিক্ষকদের কাছে পেশ করতে পারে; যে সব ছাত্ররা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানে না কিংবা তাদের কাছে ইন্টারনেট নাই।
এসাইনমেন্ট ও থিসিস লিখে সেগুলো ছাত্রদের কাছে বিক্রি করার হুকুম
প্রশ্ন: 95893
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
যদি কোন ছাত্র এই এসাইনমেন্টের মাধ্যমে কোন সনদ লাভ করা কিংবা পদোন্নতি লাভ করা কিংবা কোন পরীক্ষা পাস করার জন্য হয় তাহলে এই কাজ হারাম। এটি জালিয়াতি ও খেয়ানত। চাই এই এসাইনমেন্টগুলো ইন্টারনেট থেকে কাটছাট করে নেয়া হোক কিংবা অন্য কারো কাছ থেকে নেয়া হোক। কেননা এসাইনমেন্টে দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে— ছাত্রকে অনুশীলন করানো, তার যোগ্যতা পরীক্ষা করা, ইত্যাদি। ছাত্রের উপর আবশ্যক এটি সে নিজে করা। যদি সে অন্যের পরিশ্রমকৃত জিনিস নিয়ে নিজের নামে পেশ করে তাহলে এটি মিথ্যা জালিয়াতি।
এরা যারা অন্যদের এসাইনমেন্টগুলো লিখে দেয় তারা গুনাহতে লিপ্ত, তারা সীমালঙ্ঘনকারী ও দুর্নীতিকারী, চাই তারা কোন কিছুর বিনিময়ে লিখে দিক কিংবা কোন বিনিময় ছাড়া লিখে দিক— তারা জালিয়াতি ও মিথ্যাতে সহযোগিতা করার কারণে এবং তারা এমন ব্যক্তিকে সনদ ও পদমর্যাদা পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অংশীদার হওয়ার কারণে যে এগুলো পাওয়ার অধিকার রাখে না। এটি সাধারণ দুর্নীতি ও গোটা উম্মতের সাথে ধোকাবাজি। এর ফলে এমন ব্যক্তি পদ লাভ করে ফলে যে পদ লাভের অধিকার সে রাখে না এবং এমন ব্যক্তি ক্ষমতা পেয়ে যায় যে ক্ষমতা পাওয়ার অধিকার সে রাখে না।
এ এসাইনমেন্ট বিক্রির মাধ্যমে যে অর্থ উপার্জন করা হয় সেটি অবৈধ ও হারাম; এই অর্থ দিয়ে উপকৃত হওয়া নাজায়েয। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে দেহ হারাম থেকে গঠিত আগুনই এর জন্য অধিক উপযুক্ত”।[হাদিসটি তাবারানী ও আবু নুআইম সংকলন করেছেন এবং আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৪৫১৯) সহিহ বলেছেন]
শাইখ ইবনু উছাইমীন (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
তাদের ব্যাপারে আপনার অভিমত কি যারা তাদের এসাইনমেন্ট লিখে দেয়া, থিসিস প্রস্তুত করা কিংবা প্রাচীন কোন বই-এর তাহকীক (পাঠোদ্ধার) করার জন্য কিছু লোককে ভাড়া করে?
জবাবে তিনি বলেন: সেই ব্যক্তির জন্য দুঃখ হয়। যেমনটি প্রশ্নকারী উল্লেখ করেছে। কিছু কিছু ছাত্র তাদের এসাইনমেন্টগুলো কিংবা থিসিসগুলো তৈরী করার জন্য কাউকে ভাড়া করে; যে এসাইনমেন্ট বা থিসিসের মাধ্যমে তারা একাডেমিক সার্টিফিকেট অর্জন করে। কিংবা যে ব্যক্তি কোন বই তাহকীক করে। কাউকে বলল যে: আমাকে এই ব্যক্তিদের জীবনীগুলো সংগ্রহ করে দিন কিংবা অমুক গবেষণাপত্রটি পুর্নপাঠ করে দিন। এরপর সেটাকে অভিসন্দর্ভ হিসেবে পেশ করে এবং এর ভিত্তিতে ডিগ্রি লাভ করে। যে ডিগ্রি তাকে শিক্ষকদের মধ্যে পরিগণিত করে কিংবা এ পর্যায়ের অন্য কোন মর্যাদা। আসলে এটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্দেশ্যের বিপরীত। এবং আমার কাছে এটি এক ধরণের খেয়ানত। কেননা এর পেছনে উদ্দেশ্য সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কিছুদিন পর এই বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় যেই বিষয়ে সে ডিগ্রি অর্জন করেছে সে কোন জবাব দিতে পারবে না।
এ কারণে আমি আমার ভাইদের মধ্যে যারা বইপুস্তক তাহকীক করেন কিংবা যারা এই পদ্ধতিতে থিসিস লিখিয়ে নেন তাদেরকে এর অশুভ পরিণতির ব্যাপারে সাবধান করছি। আমি বলব: অন্যের সহযোগিতা নিতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু এভাবে নয় যে, গোটা থিসিস অন্য কারো প্রস্তুতকৃত। আল্লাহ্ সকলকে উপকারী ইলম ও নেক আমলের তাওফিক দিন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সাড়াদানকারী।[কিতাবুল ইলম থেকে সমাপ্ত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব