ইদানিং এমন কিছু চ্যানেল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যেগুলো দাবী করে যে, তারা জাদুটোনা থেকে চিকিৎসা করে— আক্রান্ত ব্যক্তির মায়ের নাম ও তার তথ্যাদি জানার মাধ্যমে। অনুরূপভাবে জ্যোতিষীপনা ও রাশিচক্রের মাধ্যমে তারা ভবিষ্যৎ জানার দাবী করে। এই চ্যানেলগুলো দেখার হুকুম কি?
যাদুবৃত্তি, কবিরাজি ও জ্যোতিষীপনার চ্যানেলগুলোর ব্যাপারে বিবৃতি
প্রশ্ন: 98153
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
“আলহামদু লিল্লাহ্। আল্লাহ্র রাসূলের প্রতি, তাঁর পরিবার-পরিজন ও তাঁর সাহাবীবর্গের প্রতি এবং তাঁর আদর্শ গ্রহণকারী সবার প্রতি আল্লাহ্র রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। পর সমাচার:
এই চ্যানেলগুলো যে জাদুবিদ্যা, কবিরাজিবিদ্যা ও জ্যোতিষীবিদ্যার প্রচার করছে এগুলো জঘন্যতম গুনাহ, পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ও মানুষকে পথভ্রষ্ট করার অন্তর্ভুক্ত। এসব বিদ্যা মিথ্যা, ভেলকিবাজি, নক্ষত্র ও রাশি দেখে ভবিষ্যতের জ্ঞানের দাবীর উপর (যেমনটি তারা বলে থাকে) নির্ভরশীল; কিংবা তাদের জ্বিন বন্ধুদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভরশীল। এমনও হতে পারে যে, এসব শয়তানী বিদ্যায় তাদের কোন অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু সম্পদ উপার্জনের জন্য তারা মিথ্যা ও ভুয়া এগুলো দাবী করে থাকে। আর এসব জ্ঞান তারা অশিক্ষিত, অসচেতন এবং দুর্বল ব্যক্তিত্বের মানুষ ছাড়া অন্যদের মধ্যে প্রচার করতে পারে না। আল্লাহ্ তাআলা যাদু, যাদুকর ও জ্যোতিষীদের নিন্দা করেছেন। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “যাদুকর যেখানেই আসুক সফল হয় না”।[সূরা ত্বহা, আয়াত: ৬৯] তিনি আরও বলেন: “তা সত্বেও তারা ফিরিশতাদ্বয়ের কাছ থেকে এমন যাদু শিখতো যা দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতো। অথচ তারা আল্লাহ্র অনুমতি ব্যাতীত তা দ্বারা কারো ক্ষতি করতে পারতো না। আর তারা তা-ই শিখতো যা তাদের ক্ষতি করতো, কোনো উপকারে আসত না। আর তারা নিশ্চিত জানে যে, যে কেউ তা খরিদ করে, তার জন্য আখেরাতে কোনো অংশ নেই।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১০২] তিনি আরও বলেন: “তখন মূসা বললেন: ‘তোমরা যা এনেছ তা জাদু, নিশ্চয় আল্লাহ্ সেগুলোকে অসার করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ অশান্তি সৃষ্টিকারীদের কাজ সার্থক করেন না।”[সূরা ইউনুস, আয়াত: ৮১] এবং সহিহ মুসলিমে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষীর কাছে এসে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করল তার চল্লিশ দিনের নামায কবুল হবে না।” এবং সুনান গ্রন্থসমূহে সংকলিত হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা গণকের কাছে এসে তাকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করল এবং সে যা বলে তাতে বিশ্বাস করল সে ব্যক্তি মুহাম্মাদের উপর যা নাযিল হয়েছে সেটাকে অস্বীকার করল।”
চাই এই জিজ্ঞাসাকারী সশরীরে তাদের কাছে যাক, কিংবা টেলিফোনের মাধ্যমে তাদেরকে কল করুক; হুকুম অভিন্ন।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ ধরণের অনুষ্ঠানগুলো দেখা থেকে সাবধান হওয়া আবশ্যকীয়। কেবল বিনোদনের জন্যও এ ধরণের অনুষ্ঠান দেখা হারাম। আর এ ধরণের অনুষ্ঠান পরিচালনকারীদেরকে প্রশ্ন করার জন্য কল করার ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত শাস্তির হুমকি প্রযোজ্য হবে। পরিবারের কর্তাদের কর্তব্য পরিবারের সদস্যদেরকে এ ধরণের অনুষ্ঠান দেখতে না দেয়া কিংবা এ সকল যাদুকর ও কবিরাজদের কল দিতে না দেয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।” তিনি আরও বলেন: “তোমাদের কেউ কোন গর্হিত কিছু দেখলে সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে, হাত দিয়ে না পারলে মুখ দিয়ে করে…”।
মুসলমানদের কর্তব্য একে অপরকে উপদেশ দেয়া ও সাবধান করা এবং এ সকল চ্যানেলের সাথে যোগাযোগ করা থেকে সতর্ক করা; যে চ্যানেলগুলোর টার্গেট অর্থ ছাড়া আর কিছু নয়; এমনকি সেটা হারাম উপায়ে হলেও। বরং তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য হচ্ছে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা ছড়ানো। আমরা বলব: حسبنا الله ونعم الوكيل (আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম অভিভাবক)।
সাক্ষরকারীগণ:
ফাদিলাতুস শাইখ আব্দুর রহমান বিন নাসের আল-বার্রাক।
ফাদিলাতুস শাইখ আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন।
ফাদিলাতুস শাইখ আব্দুল আযিয বিন আব্দুল্লাহ্ আল-রাজিহী।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব