হাদিসের ব্যাখ্যা
“বনী আদম আমাকে কষ্ট দেয়...” শীর্ষক হাদিস ও “ওহে বান্দারা, নিশ্চয় তোমরা কখনও আমাকে ক্ষতি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না...” শীর্ষক হাদিসের মাঝে সমন্বয়
কিভাবে আমরা হাদিসে কুদসি “ওহে বান্দারা, নিশ্চয় তোমরা কখনও আমাকে ক্ষতি করার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না যে আমার ক্ষতি করবে” এবং অন্য হাদিস “বনী আদম সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়। আমিই সময়। আমার হাতেই নির্দেশ। আমিই রাতদিনের পরিবর্তন ঘটাই।” এর মাঝে সমন্বয় করতে পারি? আশা করি বিস্তারিত জবাব দিবেন; যাতে করে আমি ভালভাবে বুঝতে পারি এবং ইনশাআল্লাহ্ অন্যকে শিখাতে পারি।কেউ যদি কোন কিছু দেখে বিমুগ্ধ হয় সে যখনই তা দেখবে তখনই কি পুনঃপুন বরকতের দোয়া হবে?
যদি আমি কোন কিছু দেখে মুগ্ধ হই সেক্ষেত্রে যতবার আমি দেখি ততবারই কি আমাকে ‘আল্লাহুম্মা বারিক’ (হে আল্লাহ্! বরকত দিন) বলতে হবে? নাকি প্রথমবার ‘আল্লাহুম্মা বারিক’ বলাই যথেষ্ট? কোন বার যদি না বলি সেক্ষেত্রে কি আমি গুনাহগার হব?রমযান মাসের কিয়ামুল লাইলের ফযিলত পাওয়ার জন্য রমযানের সব রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করা কি শর্ত?
আমার কাছে রমযানের কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে একটি প্রশ্ন আছে। "যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবপ্রাপ্তির আশা নিয়ে রমযান মাসে কিয়াম পালন করবে…" এ হাদিসের অর্থ কি গোটা রমযান মাসের প্রতি রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করতে হবে? যদি ত্রিশরাতের মধ্যে একটি রাত কেউ বাদ দেয় হাদিসে বর্ণিত পুরস্কার ও ক্ষমা কি সে পাবে না? কিয়ামুল লাইল এর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা কোনটি?উপদেশ দেয়ার আদবসমূহ
কাউকে উপদেশ দেয়ার রূপরেখা কি? উপদেশ কি নির্জনে দিতে হবে; নাকি সবার সামনে? কে উপদেশ দেয়ার যোগ্য?।কোন সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কিয়ামতের দিন তার জন্য শাফায়াত করার অনুরোধ করেছিলেন মর্মে কোন বর্ণনা সাব্যস্ত আছে কি?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবদ্দশায় কোন সাহাবী (কিয়ামত দিবসের সাথে সংশ্লিষ্ট) শাফায়াত (ইস্তিগফার নয়) তলব করেছেন মর্মে সাব্যস্ত হয়েছে কি?"তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে তার উচিত বিবাহ করা" শীর্ষক হাদিসের অর্থ এ নয় যে, গরীব লোককে বিয়ে করা থেকে বারণ করা
এখানে ব্রিটেনে অনেক ছাত্ররাই চাকুরী করে। কেননা তারা নিজেদেরকে হারাম থেকে বাঁচানোর জন্য বিয়ে করতে চায়। আমি দুটো হাদিস পড়েছি; মনে হচ্ছে হাদিসদ্বয় সাংঘর্ষিক। এক: "হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে তার উচিত বিয়ে করা"। অপরটি হল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক মহিলাকে এক গরীব লোকের কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন। আমি যা বুঝতে পেরেছি, প্রথম হাদিস বলছে: পুরুষের বিয়ের জন্য আর্থিকভাবে প্রস্তুত হওয়া আবশ্যক; যাতে করে স্ত্রীর খরচ চালাতে পারে। আর দ্বিতীয় হাদিস বলছে: তিনি এক গরীব লোককে বিয়ে করিয়েছেন যে কোন সম্পদের মালিক নয়। এ হাদিসদ্বয় কি সাংঘর্ষিক; নাকি আমার বুঝার ভুল আছে?নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: وأعوذ بك منك (আমি আপনার থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই) এর অর্থ কি?
আশা করব আপনারা সেজদাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك وبمعافاتك من عقوبتك وأعوذ بك منك لا أحصي ثناءً عليك أنت كما أثنيت على نفسك (হে আল্লাহ্! আমি আশ্রয় চাই: আপনার সন্তুষ্টির ওসিলায় আপনার অসন্তুষ্টি থেকে, আপনার নিরাপত্তার ওসিলায় আপনার শাস্তি থেকে, আপনার থেকে আপনার কাছে, আপনার গুণকীর্তন করে আমি শেষ করতে পারব না, আপনি নিজের গুণ নিজে যেমন উল্লেখ করেছেন আপনি তেমনিই) এর মধ্যে উদ্ধৃত وأعوذ بك منك (আমি আপনার থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই) কথাটির ব্যাখ্যা করবেন?নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের চিহ্ণাবশেষ দিয়ে বরকত লাভ করা জায়েয; তিনি ছাড়া অন্য কারোটা দিয়ে জায়েয নয়
প্রশ্ন: প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা, আমি ইন্টারনেটে একটি ওয়েব সাইট ভিজিট করেছি। সেখানে আমি এমন একটি তথ্য পেয়েছি যেটাকে আমার কাছে বিদআত মনে হয়; আল্লাহ্ই ভাল জানেন। আমি আশা করব, আপনারা আমাকে এ হাদিসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে অবহিত করবেন। কেননা হাদিসটির ব্যাপারে আমার সন্দেহ হচ্ছে। সহিহ মুসলিমের অধ্যায় ২৪ হাদিস নং ৫১৪৯ এ আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) এর ক্রীতদাস আব্দুল্লাহ্ (সে ছিল আতা এর ছেলের মামা) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: “আসমা আমাকে আব্দুল্লাহ্ বিন উমরের কাছে এই কথা বলতে পাঠালেন যে, আমার কাছে সংবাদ এসেছে যে, তুমি নাকি তিনটি জিনিসকে হারাম মনে কর। কাপড়ে (রেশমের) নকশা বা নকশী পাড়, গাঢ় লাল রং এর মীছারা (রেশমের তৈরী লাল বর্ণের হাওদার আচ্ছাদন) ও রজবের পুরো মাস রোযা পালন করা। তখন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাকে বললেন, আপনি যে রজব মাসের রোযা হারামের কথা বললেন এটা এমন ব্যক্তির পক্ষে কিভাবে বলা সম্ভব যিনি সারা বছর রোযা পালন করেন? আর আপনি যে কাপড়ে (রেশমের) পাড় বা নকশার কথা বললেন, এ সমন্ধে আমি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, রেশমী কাপড় কেবল সে লোকই পরবে (পরকালে) যার কোন হিসসা নেই। তাই আমার আশংকা হল নকশাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। আর গাঢ় লাল রঙ-এর মীছারা (পর্দার আচ্ছাদন): এই তো আব্দুল্লাহর মীছারা। দেখলাম, আসলেই সেটি গাঢ় লাল রং-এর (সুতি বা পশমী কাপড়)। এরপর আমি আসমা (রাঃ) এর কাছে ফিরে গেলাম এবং তাঁকে এ বিষয়ে খবর দিলাম। তখন তিনি বললেন: এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জুব্বা। এই বলে তিনি একটি তায়লামান কিসরাওয়ানী (পারস্য সম্রাট কিসরার দিকে সন্বন্ধযুক্ত) সবুজ রং এর একটি জুব্বা বের করলেন যার পকেটটি ছিল রেশমের তৈরি এবং এর দুই পাশের ফাঁড়া ছিল খাঁটি রেশমের টুকরা দ্বারা আবৃত। তিনি বললেন, এটি আয়িশার মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর কাছেই ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর আমি এটি নিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি পরিধান করতেন। তাই আমরা রোগীদের আরোগ্য হাসিলের জন্য এটি ধৌত করি এবং সে পানি তাদের কে পান করিয়ে থাকি।” এ হাদিস সহিহ কিনা?“যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ্র জন্য জবাই করে তার ওপর লানত হোক” এর মর্ম কী?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহ্র জন্য জবাই করে তার ওপর লানত হোক” এ কথার উদ্দেশ্য কী? কোন মেহমানের জন্য জবাই করা কি গায়রুল্লাহ্র জন্য জবাই-এর মধ্যে পড়বে?ব্যক্তিগতভাবে নামায আদায়ের ওপর জামাতে নামায আদায়ের ফযিলত সংক্রান্ত হাদিসগুলোর মাঝে সমন্বয়
সহিহ বুখারীতে দুটো হাদিস রয়েছে; ফাতহুল বারীর সংখ্যায়ন অনুযায়ী ৬৪৫ নং ও ৬৪৬ নং। ৬৪৫ নং হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ব্যক্তিগত নামাযের ওপর জামাতে নামাযের মর্যাদা ২৭গুণ”। আর ৬৪৬ নং হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ব্যক্তিগত নামাযের ওপর জামাতে নামাযের মর্যাদা ২৫ গুণ”। আশা করি আপনারা ব্যাখ্যা দিবেন ও স্পষ্ট করবেন।