অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোযা না-রাখা উত্তম? নাকি কষ্ট করে রোযা রাখাটা উত্তম?
রোগীর জন্য যদি রোযা রাখা কষ্ট হয় তাহলে উত্তম হল রোযা না-রাখা এবং যে দিনগুলোর রোযা রাখেনি সেগুলোর কাযা পালন করা। কষ্ট করে রোযা রাখা মুস্তাহাব নয়। দলিল হচ্ছে—
১। ইমাম আহমাদ (৫৮৩২) ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "নিশ্চয় আল্লাহ্ তাঁর রুখসতগুলো গ্রহণ করাকে পছন্দ করেন যেভাবে তিনি তাঁর অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করেন।"[আলাবানী "ইরওয়াউল গালিল" গ্রন্থে (৫৬৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেন]"
২। সহিহ বুখারী (৬৭৮৬) ও সহিহ মুসলিম (২৩২৭)-এ আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: "রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দুটো বিষয়ের মাঝে নির্বাচন করার এখতিয়ার দেয়া হলে তিনি সহজতম বিষয়টি গ্রহণ করতেন; যতক্ষণ না সেটা পাপ হত। পাপ হলে তিনি হতেন এর থেকে সবচেয়ে দূরত্ব রক্ষাকারী ব্যক্তি।"
ইমাম নববী বলেন: "এ হাদিসে সহজতম বিষয় ও কোমলতম বিষয় গ্রহণ করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে দলিল রয়েছে; যতক্ষণ না সেটা হারাম হয় কিংবা মাকরুহ হয়।"[সমাপ্ত]
বরং কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখা মাকরুহ। কখনও কখনও হারাম হতে পারে; যদি রোযার কারণে শারীরিক ক্ষতি হওয়ার আশংকা হয়।
কুরতুবী বলেন (২/২৭৬):
"রোগীর অবস্থা দুটো: ১। মোটেই রোযা রাখার সক্ষমতা না থাকা; তার জন্য রোযা না-রাখা ওয়াজিব। ২। কিছু শারীরিক ক্ষতি ও কষ্টের সাথে রোযা রাখতে সক্ষম হওয়া। এ ব্যক্তির জন্য রোযা না-রাখা মুস্তাহাব। এমতাবস্থায় কেবল অজ্ঞ লোকই রোযা রাখে।"[সমাপ্ত]
ইবনে কুদামা (রহঃ) "আল-মুগনী" গ্রন্থে (৪/৪০৪) বলেন:
"যদি রোগী এ রোগ সত্ত্বেও কষ্ট করে রোযা রাখে তাহলে সে মাকরুহ কাজে লিপ্ত হল। যেহেতু এ রোযা রাখার মধ্যে নিজের শারীরিক ক্ষতি করা নিহিত আছে। রোযা না-রাখাটা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে শিথিলায়ন ও আল্লাহ্র দেয়া অবকাশকে গ্রহণ করা।"[সমাপ্ত]
শাইখ বিন উছাইমীন (রহঃ) "আশ-শারহুল মুমতি" গ্রন্থে (৬/৩৫২) বলেন:
"এর মাধ্যমে আমরা কিছু কিছু ইজতিহাদকারী ও রোগীদের ভুল জানতে পারি যাদের রোযা রাখতে কষ্ট হয়; হয়তোবা শারীরিক ক্ষতিও হয় কিন্তু তারা রোযা ভাঙ্গতে অস্বীকৃতি জানান। আমরা বলব: উনারা ভুল করছেন; যেহেতু তারা আল্লাহ্র দেয়া বদান্যতাকে গ্রহণ করেননি এবং তাঁর দেয়া অবকাশকে গ্রহণ করেননি এবং নিজেদের ক্ষতি করেছেন। অথচ আল্লাহ্ তাআলা বলছেন: "তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না।"[সূরা নিসা, আয়াত: ২৯]
1319 নং প্রশ্নোত্তরটিও পড়ুন।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।