মুসলমানকে হারাম কাজকে থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কেননা সে জান্নাতে সেটা পাবে— এ কথাটি কি সঠিক যে, দুনিয়াতে হারাম বিষয়াবলী ও নিষিদ্ধ ভোগসমূহ আখিরাতে জায়েয ও বৈধ। কারণ এমন কিছু ভোগের বিষয় আছে যেমন- সমলিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা যা দুনিয়া ও আখিরাতে নিষিদ্ধ। কিভাবে একজন মুসলিম এটা থেকে নিবৃত হতে পারেন; যখন সে আখিরাতেও সেটা পাওয়ার ব্যাপারে হতাশ? দুনিয়াতে এ কর্মটি ত্যাগ করার শক্তিশালী প্রেরণা কী হতে পারে?
হারামসমূহের সম জাতীয় জিনিস কি জান্নাতে থাকবে?
প্রশ্ন: 163476
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
“মুসলমানকে হারাম কাজকে থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; কেননা সে জান্নাতে সেটা পাবে” সাধারণ অর্থ ধরে বুঝতে গেলে এ কথাটি সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ্ তাআলা আমাদের উপর যা কিছু হারাম করেছেন সেটার সবকিছু আখিরাতে পাওয়া যাবে— এমনটি নয়। বরং নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে এটি উদ্ধৃত হয়েছে; যেমন—রেশমী কাপড় পরিধান নিষিদ্ধ করা, মদ পান করা নিষিদ্ধ করা, স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাত্রে পান করা নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। কারণ মুসলিম এ জিনিসগুলো আখিরাতে পাবে; আল্লাহ্র রহমতের সাথে যেভাবে উপযুক্ত ও সেই বাসস্থানের সাথে যেভাবে উপযুক্ত সেভাবে পাবে। কারণ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরিধান করেছে সে ব্যক্তি আখিরাতে তা পরতে পারবে না। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে সে ব্যক্তি আখিরাতে তা পান করতে পারবে না। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে স্বর্ণ-রৌপ্যের পাত্রে পান করেছে সে ব্যক্তি আখিরাতে এ পাত্রদ্বয়ে পান করতে পারবে না।” এরপর তিনি বলেন: “জান্নাতীদের পোশাক, জান্নাতীদের পানীয় ও জান্নাতীদের পাত্র”।[নাসাঈ-এর সংকলিত “আস-সুনানুল কুবরা” (৬৮৬৯); আলবানী “আস-সিলসিলাতুস সাহিহা” গ্রন্থে (৩৮৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।
হারাম জিনিসের সম জাতীয় জিনিস জান্নাতে থাকলেও কোন কোন আলেমের মতে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে ঐ হারাম কর্মে লিপ্ত হবে আখিরাতে সে ব্যক্তি ঐ জিনিসটি না পাওয়াই হচ্ছে— তার শাস্তি; যেমন- গান শুনা ও অবৈধ কোন নারীকে উপভোগ করা।
ইবনে রজব আল-হাম্বলি (রহঃ) বলেন:
“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার কামনা-বাসনা থেকে রোযা (নিবৃত) থাকবে মৃত্যুর পর সে ব্যক্তি এগুলো দিয়ে ইফতার করবে। যে ব্যক্তি তার উপর যা হারাম করা হয়েছিল মৃত্যুর পূর্বেই সেটা গ্রহণ করতে তাড়াহুড়া করে ফেলেছে আখিরাতে তাকে সেটা থেকে বঞ্ছিত করা ও না-দেয়াই তার শাস্তি। এর দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী: “(তাদেরকে বলা হবে) তোমরা তোমাদের ভাল জিনিসগুলো দুনিয়ার জীবনেই নিয়েছো এবং তা উপভোগ করেছো।”[সূরা আল-আহক্বাফ, আয়াত: ২০] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করেছে সে ব্যক্তি আখিরাতে পান করবে না। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরিধান করেছে সে ব্যক্তি আখিরাতে পরিধান করবে না।”[‘লাতায়িফুল মাআরিফ’ (পৃষ্ঠা-১৪৭) থেকে সমাপ্ত]
ব্যভিচারীর উপর যে শাস্তিগুলো আবর্তিত হয় সেগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন: “সে শাস্তির মধ্যে রয়েছে: ব্যভিচারী ব্যক্তি জান্নাতে-আদন-এ উত্তম বাসস্থানসমূহে ডাগরচোখা হুরদেরকে উপভোগ করা থেকে নিজেকে বঞ্ছিত করে। আল্লাহ্ তাআলা যদি দুনিয়াতে রেশমি কাপড় পরিধানকারীকে কিয়ামতের দিন রেশমি কাপড় পরা থেকে বঞ্ছিত করার শাস্তি দিবেন, দুনিয়াতে মদপানকারীকে আখিরাতে মদপান থেকে বঞ্ছিত করার শাস্তি দিবেন। অনুরূপ শাস্তি দিবেন যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নিষিদ্ধ ছবি দেখা উপভোগ করবে তাকেও। বরং দুনিয়াতে বান্দা যে যে হারাম কাজকে উপভোগ করবে কিয়ামতের দিন বান্দা সম ধরণের নেয়ামত থেকে বঞ্ছিত হবে।”[রওযাতুল মুহিব্বীন (৩৬৫-৩৬৮) থেকে সমাপ্ত]
আর পুরুষে-পুরুষে ও নারীতে-নারীতে যৌনকর্ম আল্লাহ্ তাআলা তার বান্দাদের উপর দুনিয়াতেও হারাম করেছেন এবং জান্নাতবাসীগণ এ ধরণের কুকর্ম থেকে পবিত্র।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব