বিজ্ঞান বলে: এলিয়েন (ভিনগ্রহের প্রাণী) রয়েছে। বরং এটাও বলে যে, কিছু উড়ন্ত পিরিচ (UFO) রয়েছে। আমি বলি: হতে পারে কিছু এলিয়েন রয়েছে। কিন্তু আগে আমি এ মাসয়ালায় শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।
কুরআনে কারীম মানুষের কাছে মহাকাশ-তত্ত্ব বর্ণনা করার জন্য নাযিল হয়নি
প্রশ্ন: 225255
উত্তরের সংক্ষিপ্তসার
কুরআনে কারীম ও সহিহ সুন্নাহ এলিয়েন সংক্রান্ত জ্ঞান নিয়ে আসেনি। বরং এ সংক্রান্ত তথ্যগুলো কুরআন-সুন্নাহ্র দলিলগুলো বুঝার ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও ইজতিহাদ; যে তথ্যগুলো সঠিক হওয়া কিংবা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তথ্যকে ইসলামের সাথে সম্বন্ধিত করা যাবে না।
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
জাগতিক জ্ঞানসমূহ ও মহাকাশের আবিষ্কারগুলো ব্যাখ্যা করার জন্য শরিয়ত আসেনি। স্থলজগৎ, জলজগৎ বা মহাশূণ্যের প্রাণীসমূহের বিবরণ দেয়া কিংবা প্রাকৃতিক জ্ঞান সেটা যে শাখা ও অধ্যায়ের হোক না কেন; সেগুলো বিশ্লেষণ করার জন্য শরিয়ত আসেনি। শরিয়ত এসেছে উত্তম আখলাক, আমল ও অবস্থার দিকনির্দেশনামূলক বার্তা নিয়ে। আল্লাহ্র পথ দেখানো, তাঁর নাম ও গুণসমূহের পরিচিতি জানানো, তাঁর সৃষ্টি ও আদেশ-নিষেধ অবহিত করার আলোকবর্তিকা নিয়ে; যাতে করে দুর্বল এ মানব দুনিয়াতে সুষ্ঠু জীবন যাপন করা ও আখিরাতে সুখী হওয়ার মাধ্যমে প্রকৃত সুখ অর্জন করতে পারে। যে সুখের দিকে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরকে ডাকছেন এবং যে সুখের সন্ধান দেয়ার জন্য তাঁর কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন, তাঁর রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেন: "হে নবী! আমি আপনাকে পাঠিয়েছি একজন সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে; এবং আল্লাহ্র হুকুমে তাঁর দিকে একজন আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল এক প্রদীপরূপে।"[সূরা আহযাব, আয়াত: ৪৫-৪৬]
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: "আমি আপনাকে একজন সাক্ষী, সুসুংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে পাঠিয়েছি। যাতে তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, রাসূলকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ্র পবিত্রতা বর্ণনা করা।"[সূরা ফাতহ, আয়াত: (৭-৮)]
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: "আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও অনুগ্রহ। আর তা জালেমদের শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।"[সূরা বনী ইসরাইল (৮২)]
ইতিপূর্বে আমাদের ওয়েবসাইটের 211860 নং প্রশ্নোত্তরে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়টি নিরসন করা হয়েছে।
তাই এলিয়েন সংক্রান্ত কিংবা ভিনগ্রহে ও গ্যালাক্সিতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকা বা না-থাকা সংক্রান্ত কোন তথ্যকে ইসলামী শরিয়তের দিকে সম্বন্ধিত করার নিশ্চয়তা দেয়া প্রজ্ঞাপূর্ণ নয়। কোন গবেষক এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ যা করতে পারেন সেটা হল কুরআন-সুন্নাহর কিছু দলিলের ইঙ্গিতকে ভিত্তি করে তিনি নিজস্ব চিন্তাভাবনা (ইজতিহাদ) খাটাতে পারেন; তবে অকাট্য ও নিশ্চয়তা প্রদানের ভাষা ব্যবহার করে নয় এবং নিজের মনে যা আছে সেটার সাথে দলিলকে খাপ খাওয়ানোর জন্য গোয়ার্তুমি করে নয়। কেননা এ ধরণের চর্চা যথাযথ মানহাজ (গবেষণা পদ্ধতি) নয়। এ ধরণের চর্চার শেষ পরিণতি হচ্ছে দোদুল্যমান উপস্থাপন ও সাংঘর্ষিক ভিত্তি পত্তন।
তবে যে বিষয়ের প্রতি আমরা সুদৃঢ় ঈমান রাখি সেটা হল আমাদের জ্ঞান আল্লাহ্ তাআলার সৃষ্টিকে আয়ত্ব করার মত নয় এবং তাঁর সৃষ্টি আমাদের বিবেকবুদ্ধিতে সীমাবদ্ধ হওয়ার চেয়েও অনেক বড়। যেমনটি আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: "তারা কি মনে করে না যে, যে আল্লাহ্ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের মত মানুষও (পুনরায়) সৃষ্টি করতে সক্ষম? তিনি তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ ঠিক করে দিয়েছেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও জালেমরা (মানতে) অস্বীকার করেছে, তারা কেবল অবিশ্বাসই করেছে।"[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৯৯]
আল্লাহ্ তাআলা বলেন: "আপনার প্রভু যা ইচ্ছা আর পছন্দ করেন তাই সৃষ্টি করেন। তাদের কোন পছন্দের স্বাধীনতা নেই। আল্লাহ্ কত মহান! তারা (তাঁর সাথে) যা শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।"[সূরা ক্বাছাছ, আয়াত: ৬৮]
তিনি আরও বলেন: "আসমান ও জমিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ্র। তিনি যা চান তাই সৃষ্টি করেন।"[সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪৯]
ইতিপূর্বে 129972 নং প্রশ্নোত্তরে এ বিষয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব