হিংসা ও যৌন কল্পনাগুলো কি নির্জনের গুনাহর মধ্যে পড়বে?
নির্জনের গুনাহগুলো কি কি?
প্রশ্ন: 225875
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
এক:
যৌন কল্পনাগুলো মনের চিন্তা ও মনের কথা; যা মানুষের মনে উদয় হয়। মনের কথা যদি মনে স্থির না হয় এবং ব্যক্তি এটাকে মনে ধরে না রাখে তাহলে আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে তা ক্ষমার্হ। সুতরাং আকস্মিক কল্পনা ক্ষমার্থ। তবে বান্দার উপর ওয়াজিব হল এমন কল্পনাকে প্রতিরোধ করা এবং আগাতে না দেয়া। কোন মুসলিমের জন্য এমন কোন কল্পনা ডেকে আনা ও এগুলোর চিন্তায় বিভোর হওয়া জায়েয নয়। আর কখনও আকস্মিক কোন চিন্তার উদ্রেক হলে এগুলোকে আগাতে দেয়াও তার জন্য জায়েয নয়। কেননা আগাতে দিলে এটি তাকে হারামে নিমজ্জিত করবে।
দেখুন: 84066 নং প্রশ্নোত্তর।
দুই:
হিংসা একটি নিন্দনীয় গুণ। একজন মুসলিমের ওয়াজিব হল নিজেকে হিংসা মুক্ত রাখা। শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
হিংসা: কারো কারো মতে, অন্যের কাছ থেকে আল্লাহ্র কোন নেয়ামত দূরীভুত হওয়া কামনা করা। কারো কারো মতে, হিংসা হল আল্লাহ্ তাআলা কাউকে যে নেয়ামত দিয়েছেন সেটাকে অপছন্দ করা। প্রথম অভিমতটি আলেমদের নিকট মশহুর। আর দ্বিতীয়টি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়ার নির্ণীত। অর্থাৎ মানুষের প্রতি আল্লাহ্র কোন নেয়ামতকে অপছন্দ করলেই তা হিংসা হিসেবে গণ্য হবে। হিংসা করা হারাম। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিংসা করা থেকে নিষেধ করেছেন। এটি ইহুদীদের স্বভাব; যারা মানুষের সাথে হিংসা করে— আল্লাহ্ মানুষকে যে অনুগ্রহ দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে। হিংসার কুফল অনেক।"[ফাতাওয়া নুরুন আলাদ দারব থেকে (২/২৪)]
তিন:
নির্জনের গুনাহগুলোর ব্যাপারে একটি হাদিস যা ইবনে মাজাহ (৪২৪৫) বর্ণনা করেছেন: সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: "আমি আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু মানুষের কথা জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামা পাহাড়সম শুভ্র নেকী নিয়ে হাজির হবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সে নেকগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণাতে পরিণত করে দিবেন। সাওবান (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদেরকে তাদের পরিচয় দিন ও আমাদের কাছে পরিস্কার করে দিন যাতে করে না জেনে আমরা তাদের মধ্যে পড়ে না যাই। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদের জাতি। তোমরা যেভাবে রাতে ইবাদত কর তারাও রাতে ইবাদত করে। কিন্তু তারা এমন লোক যারা নির্জনে আল্লাহ্র নিষেধাবলীতে লিপ্ত হয়।"[আলবানী 'সহিহ ইবনে মাজাহ'তে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
হাফেয ইবনুল জাওযি (রহঃ) বলেন:
"গুনাহ থেকে সাবধান! গুনাহ থেকে সাবধান! বিশেষতঃ নির্জনের গুনাহ থেকে। কেননা আল্লাহ্র সাথে দ্বন্দ করা বান্দাকে আল্লাহ্র চোখে মূল্যহীন করে দেয়। তোমার ও আল্লাহর মাঝের নিভৃতের অবস্থাকে সংশোধন কর; তবে তিনি তোমার বাহ্যিক অবস্থাগুলো সংশোধন করে দিবেন।"[সাইদুল খাত্বের (পৃষ্ঠা-২০৭) থেকে সমাপ্ত]
দেখুন: 134211 নং প্রশ্নোত্তর।
এ হাদিসটির উদ্দেশ্য এ নয়: যে ব্যক্তি নির্জনে গুনাতে লিপ্ত হয় এমন প্রত্যেক ব্যক্তি। কেননা সগিরা গুনাহ থেকে কেউই মুক্ত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "প্রত্যেক বনী আদম ভুলকারী। সর্বোত্তম ভুলকারী হচ্ছে তওবাকারীগণ।"[সুনানে তিরমিযি (২৪৯৯), আলবানী 'সহিহুত তিরমিযি' গ্রন্থে হাদিসটিকে 'হাসান' বলেছেন]
বরং এ হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে: মুনাফিকগণ কিংবা লৌকিকতাতে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ। যারা মানুষের সামনে নিজেদের দ্বীনদারি ও তাকওয়া প্রকাশ করে। আর যখন মানুষের চোখের আড়াল হয় তখন তারা তাদের আসল রূপে প্রকাশিত হয়। তারা আল্লাহ্ তাআলার মর্যাদাকে ভ্রুক্ষেপ করে না।
ইবনে হাজার আল-হাইছামী (রহঃ) বলেন:
"৩৫৬ তম কবিরা গুনাহ: মানুষের সামনে নেককারদের ভাব প্রকাশ করা, আর নিভৃতে গুনাহতে লিপ্ত হওয়া; এমনকি সেটা ছগিরা গুনাহ হলেও। ইবনে মাজাহ এক সনদে সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, যে সনদের রাবীগণ ছিকাত (নির্ভরযোগ্য)। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: "আমি আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু মানুষের কথা জানি যারা কিয়ামতের দিন তিহামা পাহাড়সম শুভ্র নেকী নিয়ে হাজির হবে। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন সে নেকগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধুলিকণাতে পরিণত করে দিবেন।…" ।
এরপর এ আলোচনার শেষে তিনি বলেন:
সতর্কতা: এ বিষয়টিকে কবিরা গুনাহর মধ্যে গণ্য করাটা প্রথম হাদিসটির বাহ্যিক মর্ম এবং তা অবান্তর কিছু নয়; যদিও আমি কাউকে কবিরা গুনাহর মধ্যে এটাকে উল্লেখ করতে দেখিনি। কেননা যে ব্যক্তির অভ্যাস হল সুন্দর ভাব ফুটিয়ে তোলা; আর মন্দ ভাবকে লুকিয়ে রাখা মুসলমানদের উপর তার অনিষ্ট ও ধোঁকা জঘন্য— তাকওয়ার রজ্জু ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে এবং তার পক্ষ থেকে ভয় থাকার কারণে।"[আল-জাওয়াযের আন ইকতিরাফিল কাবায়ির (৩৫৬)]
পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখায় যে, সে তাদেরকে ভালবাসে; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে মানুষকে ঘৃণা করে ও হিংসা করে সে নিভৃতের গুনাতে লিপ্ত হয়েছে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি দ্বীনদারি প্রকাশ করে; অথচ সে দ্বীনদার নয় কিংবা যে সচ্চরিত্র ও রক্ষণশীলতা প্রকাশ করে অথচ সে নিভৃতে খারাপ চিন্তাভাবনায় মজে থাকে তার ব্যাপারে এ হাদিসে উল্লেখিত কঠিন শাস্তির হুকমি প্রযোজ্য হতে পারে। সে শাস্তিটি হল: তার নেক আমলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়া।
আমরা আল্লাহ্ তাআলার কাছে ক্ষমা ও নিরাপত্তার প্রার্থনা করছি।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব