0 / 0

মুমিন বান্দা আল্লাহ তা‌আলার সাক্ষাৎ পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আশা ও ভয়ের মাঝে থাকবে

প্রশ্ন: 228924

আল্লাহ হাদীসে কুদসীতে বলেন: “আমার ব্যাপারে আমার বান্দা যেমন ধারণা রাখে আমি তেমনই। সুতরাং সে আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা ধারণা করুক।” আর উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি উক্তি রয়েছে: “যদি আমার এক পা জান্নাতে আর অন্য পা জান্নাতের বাইরে থাকত, তবুও আমি আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করতাম না।” এখানে কি আমাদের নেতা উমর (রাঃ) আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা করেননি? তিনি তো জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীদের একজন। আমাদের নেতা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরে তিনি দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ সাহাবী। বান্দার অন্তর প্রশান্ত হলে কি সে আল্লাহর পরিকল্পনাকে ভয় করে? এই উক্তির সাথে হাদীসটির সম্পর্কের স্পষ্ট ব্যাখ্যা কামনা করছি।

উত্তর

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

এক:

বুখারী (৭৪০৫) ও মুসলিম (২৬৭৫) বর্ণনা করেন, আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আল্লাহ তায়ালা বলেন: আমার বান্দা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করে, আমি তেমনই।”

প্রশ্নে উল্লিখিত পাঠে হাদীসটি বণর্না করেচেন: ইমাম আহমদ (১৬০১৬) ও অন্যান্যরা। সুলাইমান ইবন আবিস-সায়েব এর সূত্রে তিনি বলেন: হাইয়ান আবুন-নদ্বর আমাকে বলেন: আমি ওয়াসেলা ইবনুল আসক্বা‘য়ের সাথে আবুল আসওয়াদ আল-জুরাশীর কাছে তার মৃত্যুর পূর্বের অসুস্থ থাকা অবস্থায় তার কাছে প্রবেশ করি। ওয়াসেলা তাকে সালাম দিয়ে বসলেন। আবুল আসওয়াদ ওয়াসেলার ডান হাত ধরে তার দুই চোখে ও চেহারায় মুছলেন; কারণ এই হাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাইয়াত নিয়েছিল। ওয়াসেলা তাকে বললেন: আমি আপনাকে একটি বিষয়ে কি প্রশ্ন করব? আবুল আসওয়াদ বললেন: কী সে প্রশ্ন? ওয়াসেলা বললেন: আপনার রবের ব্যাপারে আপনার ধারণা কেমন? আবু আসওয়াদ মাথা নাড়িয়ে ইঙ্গিত দিলেন যে তিনি উত্তম ধারণা করেন। ওয়াসেলা বললেন: সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কারণ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: মহান আল্লাহ বলেন: “আমার ব্যাপারে আমার বান্দা যেমন ধারণা করে, আমি তেমনই। সুতরাং সে আমার ব্যাপারে যেমন খুশি ধারণা পোষণ করুক।”[মুসনাদ গ্রন্থের আর-রিসালাহ ভার্সনের মুহাক্কিকরা বলেন: এর সনদ সহীহ। শাইখ আলবানী তার সহীহুল জামে গ্রন্থে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “আলেমরা বলেন: আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণার অর্থ হলো এই বিশ্বাস করা যে তিনি বান্দার প্রতি দয়া করবেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিবেন। তারা বলেন: সুস্থ অবস্থায় বান্দা ভীত ও আশান্বিত থাকবে; উভয়টি সমান অবস্থায় থাকবে। কারো মতে: ভয়ের মাত্রা বেশি থাকবে। তারপর যখন মৃত্যুর আলামত প্রকাশ পেতে থাকবে, তখন আশার মাত্রা বাড়িয়ে দিবে অথবা কেবল আশাই করবে। কারণ ভয়ের উদ্দেশ্য হলো পাপ ও মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং বেশি বেশি আল্লাহর আনুগত্যমূলক কাজ করা। সে পরিস্থিতিতে এগুলো করা অসম্ভব হয়ে যায়। সুতরাং তখন আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা মুস্তাহাব, যে সুধারণায় অন্তর্ভুক্ত হয় আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষিতা ও তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ।”[শারহুন নববী আলা-মুসলিম (১৭/২১০)]

ইমাম আহমদ (৯০৭৬) বর্ণনা করেন: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মহান আল্লাহ বলেন: আমার ব্যাপারে আমার বান্দা যেমন ধারণা করে, আমি তেমন। সে যদি আমার ব্যাপারে ভালো ধারণা করে, তাহলে তার জন্য তেমন হবে। আর যদি আমার ব্যাপারে মন্দ ধারণা করে, তাহলে তার জন্য তেমনই হবে।”[মুসনাদ গ্রন্থের মুহাক্কিকরা হাদীসটিকে সহিহ বলে গণ্য করেছেন]

মুনাওয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “অর্থাৎ যদি আমার ব্যাপারে সুধারণা রাখে, তাহলে আমি তার প্রতি ভালো কিছু করব। আর যদি আমার ব্যাপারে মন্দ ধারণা রাখে, তাহলে আমি তার প্রতি মন্দ কিছু করব।”[সমাপ্ত][ফাইযুল ক্বাদীর (২/৩১২)]

সুতরাং মুসলিমের উচিত আমল যথাযথভাবে করার মাধ্যমে রবের ব্যাপারে সুধারণা রাখা এবং আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া। সে যদি মন্দ কিছু করে থাকে, তাহলে কালবিলম্ব না করে তাওবা করার মাধ্যমে সুধারণা করবে। আর আশা রাখবে যে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং তার ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করবেন।

দুই:

আল্লাহ তাআলা বলেন:

أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ

“তারা কি আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করেছিল? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত লোকরা ছাড়া কেউ আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করে না।”[সূরা আ’রাফ: ৯৯]

শাইখ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বান্দাদেরকে পাপে অবিচল থাকা এবং আল্লাহর অধিকারে অবহেলা করার পরও তার পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করার ব্যাপারে সতর্ক করা। তাদের ব্যাপারে আল্লাহর পরিকল্পনা বলতে উদ্দেশ্য হলো: তারা পাপে লিপ্ত থাকা এবং আল্লাহর নির্দেশের বিপরীত কাজ করার পরও আল্লাহ তাদেরকে ছাড় দেয়া ও তাদের প্রতি নিয়ামত বাড়িয়ে দেয়া। ফলে তারা উদাসীন অবস্থায় হঠাৎ করে শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার উপযুক্ত হবে; কারণ তারা পাপে অটল ছিল এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবত।”[সমাপ্ত][মাজমুউ ফাতাওয়া ইবন বায (২৪/২৩২)]

তিনি আরো বলেন: ‘মুসলিমের করণীয় হলো নিরাশ না হওয়া এবং নিজেকে নিরাপদ মনে না করা। সে যেন আশা ও ভয়ের মাঝামাঝি থাকে। কারণ আল্লাহ তাআলা নিরাপদ ভাবা ব্যক্তিদের নিন্দা করেছেন এবং নিরাশ ব্যক্তিদেরও নিন্দা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: “তারা কি আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করেছিল? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা ছাড়া কেউ আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ বোধ করে না।” তিনি আরো বলেন: “তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” সুতরাং শরীয়তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উচিত হলো পুরুষ কিংবা নারী হোক সে যেন হতাশ হয়ে না পড়ে। সে যেন নিরাশ হয়ে কাজ ছেড়ে না দেয়। বরং সে যেন আশা ও ভয়ের মাঝামাঝি থাকে। সে যেন আল্লাহকে ভয় করে, পাপ কাজ থেকে সতর্ক থাকে, দ্রুত তাওবা করে, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিরাপদ মনে না করে, পাপের উপর অবিচল না থাকে এবং পাপের ব্যাপারে শৈথিল্য অবলম্বন না করে।”[সমাপ্ত][ইবনে বাযের ‘ফাতাওয়া নূরুন আলাদ্দারব’ (৪/৩৮)]

ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “এ কারণে হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: মুমিন আল্লাহর আনুগত্য করে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। আর পাপী ব্যক্তি পাপকাজ করে নিজেকে নিরাপদ ভেবে।”[সমাপ্ত][তাফসীরু ইবনে কাসীর (৩/৪৫১)]

তিন:

কিছু মানুষ উল্লেখ করে যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু (আবার কেউ কেউ উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন) বলেন: “যদি আমার দুই পায়ের কোনো একটি পা জান্নাতে থাকে আর অন্যটি জান্নাতের বাইরে থাকে, তবুও আমি আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করব না।” আমাদের জানামতে কোনো হাদীস গ্রন্থে এটি উল্লিখিত হয়নি এবং কোনো আলেম এটি উল্লেখ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই।

শাইখ আলবানী রাহিমাহুল্লাহুকে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: “আমি এটি জানি না।”[সমাপ্ত]

একে তো কথাটি প্রমাণিত নয়। অধিকন্তু কথাটি নিয়ে আপত্তি রয়েছে। মুমিন যতক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করবে না ততক্ষণ আল্লাহর পরিকল্পনা থেকে নিজেকে নিরাপদ মনে করবে না। জান্নাতে পা রাখলেই সে নিরাপদ মনে করবে। আর এমনটি কখনো জানা যায়নি যে, কোনো ব্যক্তি এক পা জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আল্লাহ তাকে সেখান থেকে বের করে জাহান্নামে ঢুকিয়েছেন।

ইমাম আহমদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: বান্দা কখন প্রশান্তির স্বাদ পাবে?

তিনি বলেন: “জান্নাতে প্রথমবার পা রাখার পর।”[সমাপ্ত][ত্বাবাকাতুল হানাবিলাহ: (১/২৯৩)]

আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android