ডাউনলোড করুন
0 / 0

সাহসিকতার পরিচয় ও সাহসিকতার গুণে গুণান্বিত হওয়ার উপায়সমূহ

প্রশ্ন: 289116

ইসলামে সাহসিকতা কী? ব্যক্তি কীভাবে সাহসী হয়ে উঠবে?

উত্তরের সংক্ষিপ্তসার

সাহসিকতা হলো বিপদাপদে অন্তর দৃঢ় থাকা এবং ভয়ভীতির সময়ে হৃদয় স্থির থাকা।

আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা

এক:

الشَّجَاعَة (সাহসিকতা) শব্দের আভিধানিক অর্থ: বিপদে অন্তর শক্ত থাকা। شَجُعَ، شَجَاعَة অর্থ: বিপদের মুহূর্তে শক্ত ছিল।

সাহসী পুরুষকে বলা হয়: شُجَاع, সাহসী নারীকে বলা হয়: شُجَاعَة, বহু সাহসী নারীকে বলা হয়: نِسْوَة شُجَاعَات, সাহসী জনসমষ্টিকে বলা হয়: قَوْمٌ شُجَاعاء، وشُجْعان، وشَجَعة [তাহযীবুল লুগাহ (১/২১৪), লিসানুল ‘আরাব (৮/১৭৩)]

ইবনু ফারিস রাহিমাহুল্লাহ বলেন: ‘ش, جع দিয়ে কেবল একটি ধাতু। এটি দুঃসাহস ও অগ্রগামিতার অর্থ নির্দেশ করে।’[মাকাইসুল লুগাহ (৩/২৪৭) থেকে সমাপ্ত]

দুই:

পারিভাষিক অর্থে:

الشجاعة (সাহসিকতা) হল: ثبات الْقلب عِنْد النَّوَازِل،  واستقراره عِنْد المخاوف (বিপদাপদে অন্তর দৃঢ় থাকা এবং ভয়ভীতির সময়ে হৃদয় স্থির থাকা।)

ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “বহু মানুষ সাহসিকতার সাথে শক্তিকে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। অথচ দুটি ভিন্ন বিষয়। সাহসিকতা হল বিপদাপদে অন্তর দৃঢ় থাকা; যদিও ব্যক্তি (শারীরিকভাবে) দুর্বল হয়।

আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে এই উম্মতের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি। কিন্তু উমর (রাঃ) সহ অন্যরা তাঁর চেয়ে শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু তিনি এমন সব ক্ষেত্রে অন্তরের দৃঢ়তার জন্য সাহাবীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন যেগুলোতে পাহাড় পর্যন্ত টলে যায়। এ সকল ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দৃঢ় মন ও স্থির চিত্তের অধিকারী। সাহসী ও বীর সাহাবীরা তাঁর কাছে আশ্রয় নিত। তিনি তাদেরকে দৃঢ় রাখতেন এবং সাহস যোগাতেন।”[আল-ফুরুসিয়্যাহ (পৃ. ৫০০) থেকে সমাপ্ত]

তিনি আরো বলেন: “সাহসিকতা অন্তরের বিষয়। আর সেটা হল ভয়ভীতির সময়ে অন্তরের দৃঢ়তা ও স্থিরতা।

ধৈর্য ও সুধারণা থেকে এই চরিত্রের সৃষ্টি হয়। ব্যক্তি যখন বিজয়ী হওয়ার ধারণা রাখে এবং ধৈর্য তার সহযোগী হয়; তখন সে দৃঢ় থাকে।

অনুরূপভাবে কাপুরুষতার জন্ম কুধারণা ও অধৈর্য থেকে। এমতাবস্থায় ব্যক্তি বিজয়ের কথা ভাবে না এবং ধৈর্যও তার সহযোগী হয় না।

কাপুরুষতার উৎপত্তি কুধারণা ও মনে খারাপ কুমন্ত্রণা থেকে। …”[আর-রূহ (পৃ. ২৩৬) থেকে সমাপ্ত]

ইবনে হাযম রাহিমাহুল্লাহ বলেন: “সাহসিকতার সংজ্ঞা হল: মৃত্যু পর্যন্ত জান ব্যয় করা— ধর্ম রক্ষায়, নারীর প্রতিরক্ষায়, নির্যাতিত প্রতিবেশী ও মজলুম আশ্রয়প্রার্থীর প্রতিরক্ষায়, সম্পদ বা ইজ্জতের উপর জুলুমের শিকার ব্যক্তির প্রতিরক্ষায় এবং সত্যের পথে অবিচল সকল মজলুমের প্রতিরক্ষায়; চাই বিরোধীরা কম হোক বা বেশি হোক।

উল্লেখিত ক্ষেত্রে কসুর করাই হলো: কাপুরুষতা ও ভীরুতা।

দুনিয়াবী স্বার্থে এটি ব্যয় করা: অবিবেচনাপ্রসূত কাজ ও নির্বুদ্ধিতা।

এর চেয়ে নির্বোধ হল: যে ব্যক্তি অনিবার্য অধিকারগুলো থেকে মানুষকে বাধা দেয়ার জন্য নিজের জান ব্যয় করে কিংবা যে ব্যক্তি মানুষকে বাধা দেয় তার জন্য নিজের জান ব্যয় করে।”[আল-আখলাক্ব ওয়াস-সিয়ার: (পৃ. ৩২) থেকে সমাপ্ত]

তিন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে সাহসী মানুষ। বুখারী (২৯০৮) ও মুসলিম (২৩০৭) বর্ণনা করেন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে সুশ্রী ও সাহসী। এক রাতে মদীনাবাসী (শব্দ শুনে) আতঙ্কিত হল এবং শব্দের উৎসের দিকে বের হল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাদের দেখা হল এমতাবস্থায় যে, তিনি পরিস্থিতি নিশ্চিত হয়ে ফিরছিলেন। এ সময় তিনি আবু তালহার জিনবিহীন ঘোড়ার পিঠে সওয়ার ছিলেন এবং তাঁর কাঁধে তরবারী ঝুলানো ছিল। তিনি তাদের বলছিলেন: “তোমরা ভীত হয়ো না, তোমরা ভীত হয়ো না

চার:

সাহসিকতার গুণে গুণান্বিত হওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে আমরা কিছু উল্লেখ করছি:

  • ঈমানের মজবুতি ও ঈমানের উপর অবিচলতা।
  • ইসলামের বীর ও সাহসীদের জীবনী পড়া।
  • হক্ব কথা বলা ও সত্য প্রকাশে নির্ভীকতা।
  • মন্দ কাজের বিরোধিতা ও নিষেধ করায় নির্ভীকতা।
  • নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الغَضَبِ . (কুস্তিগীর প্রকৃত বীর নয়। বরং সেই আসল বীর যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।)[বুখারী (৬১১৪), মুসলিম (২৬০৯)]

ইবনুল আসীর তাঁর ‘নিহায়া’ বইয়ে (৩/২৩) বলেন: “الصُّرَعَة শব্দের অর্থ: المُبَالِغُ في الصِّرَاع الذي لَا يُغْلَبُ (কুস্তিতে প্রবল পারদর্শী ব্যক্তি যাকে হারানো যায় না)। এটাকে নবীজী এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিয়ে এসেছেন যে রাগের মুহূর্তে নিজে পরাজিত ও অবদমিত করতে পারে। কারণ যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল সে তার সর্বাধিক শক্তিশালী ও সর্বনিকৃষ্ট শত্রুকে দমন করতে পারল।”[সমাপ্ত]

  • শরয়ী নির্দেশসমূহের সম্মান করা।
  • আল্লাহর পবিত্র বিষয়গুলোকে মর্যাদা দেওয়া।
  • অগ্রসর হওয়ার স্থানগুলোতে অগ্রসর হওয়া।
  • মজলুমকে সাহায্য করা এবং তাকে জুলুম থেকে মুক্ত করা।

আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ।

সূত্র

ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব

at email

নিউজ লেটার পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

নিয়মিত আপডেট ও ওয়েবসাইটের নিত্য নতুন তথ্য পেতে ইমেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করুন

phone

ইসলাম প্রশ্ন এবং উত্তর অ্যাপ্লিকেশন

কন্টেন্টে আরও দ্রুত অনুসরণ করুন এবং ইন্টারনেট ছাড়া ব্রাউজ করার সুযোগ

download iosdownload android