হাদিসে এসেছে: “প্রত্যেক আযানদ্বয়ের মাঝে নামায আছে, প্রত্যেক আযানদ্বয়ের মাঝে নামায আছে, প্রত্যেক আযানদ্বয়ের মাঝে নামায আছে। এরপর তৃতীয়বারে বলেছেন: যে ব্যক্তি চায়।” এর মধ্যে কি নারীও পড়বে? যদি নারী নিজের বাসায় নামায পড়েন তিনি কি আযান ও ইক্বামতের মাঝে নামায পড়বেন; নাকি এটি মসজিদে নামায আদায়কারীর জন্য? যদি কোন নারী বাসাতে নামায পড়া অবস্থায় নামাযের ইক্বামত হয়ে যায় সেক্ষেত্রে কি তিনি এই দুই রাকাত নামায আদায় করবেন?
আযান ও ইকামাতের মাঝের দুই রাকাত নামায পুরুষদের মত নারীদের জন্যেও কি মুস্তাহাব?
প্রশ্ন: 332135
উত্তরের সংক্ষিপ্তসার
সুন্নাহ্ প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক আযান ও ইক্বামতের মাঝে দুই রাকাত নামায পড়া মুস্তাহাব। শরিয়তের বিধি-বিধানের মূল অবস্থা হল: এটি নর-নারী সকলের জন্য আম (সাধারণ); যদি না নারীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের জন্য খাস কোন দলিল না আসে কিংবা পুরুষদের বাদ দিয়ে নারীদের জন্য খাস কোন দলিল না আসে। এই মাসয়ালায় পুরুষদেরকে খাস করে কোন দলিল উদ্ধৃত হয়নি। সুতরাং এর হুকুম মূল অবস্থার উপর বলবৎ থাকবে। আর তা হল আযান ও ইকামতের মাঝে নামায পড়া নর-নারী সকলের জন্য মুস্তাহাব; সেটি মসজিদে হোক কিংবা বাসাতে।
Table Of Contents
প্রত্যেক আযান ও ইকামাতের মাঝে দুই রাকাত নামায পড়া মুস্তাহাব:
আব্দুল্লাহ্ বিন মুগাফ্ফাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “প্রত্যেক দুই আযানের মাঝে নামায আছে, প্রত্যেক দুই আযানের মাঝে নামায আছে। তিনি তৃতীয়বারে বলেছেন: যে ব্যক্তি চায়।”[সহিহ বুখারী (৬২৭) ও সহিহ মুসলিম (৮৩৮)]
হাদিসে দুই আযান দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আযান ও ইক্বামত।
খাত্তাবী বলেন: “দুই আযান দ্বারা উদ্দেশ্য করেছেন: আযান ও ইক্বামত। এখানে দুটো নামের একটিকে অপরটির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন: খেজুর ও পানিকে বলা হয় কালো জিনিসদ্বয়; অথচ কালো হচ্ছে দুটোর একটি। অনুরূপভাবে আবু বকর ও উমর (রাঃ) দুইজনের জীবনী বুঝাতে বলা হয়: দুই উমরের জীবনী।
তবে এ সম্ভাবনাও রয়েছে যে, এ দুটোর প্রত্যেকটির প্রকৃত নাম আযান। যেহেতু আযানের বুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে অবহিতকরণ। আযান হচ্ছে নামাযের ওয়াক্ত উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি অবহিতকরণ; আর ইক্বামত হচ্ছে নামাযের কর্ম সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি অবহিতকরণ।”[সমাপ্ত]
হাদিসটি প্রত্যেক আযানদ্বয়ের মাঝে দুই রাকাত নামায পড়া মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে দলিল। ইতিপূর্বে 163470 নং প্রশ্নোত্তরে এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।
শরয়ি বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মূলনীতি হল তা নর-নারী সকলের জন্য আম
শরয়ি বিধি-বিধানগুলোর ক্ষেত্রে মূলনীতি হল তা নর-নারী সকলের জন্য আম; যতক্ষণ পর্যন্ত না পুরুষদের জন্য খাস মর্মে কোন দলিল উদ্ধৃত না হয় কিংবা নারীদের জন্য খাস মর্মে কোন দলিল উদ্ধৃত না হয়।
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) ‘আশ-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (৩/২৭) বলেন: “মূলনীতি হলো: যা পুরুষদের জন্য সাব্যস্ত তা নারীদের জন্যেও সাব্যস্ত এবং যা নারীদের জন্য সাব্যস্ত তা পুরুষদের জন্যেও সাব্যস্ত; তবে অন্য দলিল থাকলে সেটা ভিন্ন কথা।”[সমাপ্ত]
তিনি ‘ফাতহু যিল জালালি ওয়াল ইকরাম’ গ্রন্থে (২/৫৩০) বলেন: মূলনীতি হলো: বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে পুরুষদের সাথে নারীরাও অংশীদার; যদি না ভিন্ন কোন দলিল উদ্ধৃত না হয়। অনুরূপভাবে নারীদের জন্য দেয়া বিধানে পুরুষরাও অন্তর্ভুক্ত; যদি না ভিন্ন কোন দলিল উদ্ধৃত না হয়।”[সমাপ্ত]
এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে ভিন্ন কোন দলিল উদ্ধৃত হয়নি যা প্রমাণ করে যে, এটি পুরুষদের জন্য খাস; নারীদের জন্য নয়। অতএব, এর হুকুম মূলের উপর বলবৎ থাকবে। আর তা হলো: আযান ও ইকামাতের মাঝখানে দুই রাকাত নামায পড়া নর-নারী সকলের জন্য মুস্তাহাব; চাই তা মসজিদে হোক কিংবা বাসাতে।
নারীর ক্ষেত্রে এ বিধানটি মসজিদে নামায আদায়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে না; বরং নারীর ক্ষেত্রে এটি আযান হওয়া এবং তার ফরয নামায আদায়ের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে হতে হবে। অর্থাৎ মুয়াজ্জিন আযান দেয়ার পর থেকে কোন নারী ফরয নামায পড়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি দুই রাকাত নামায পড়তে পারেন; এমনকি সেটা যদি মসজিদে নামায হয়ে যাওয়ার পরেও হয় তবুও।
এ কথা বলা হচ্ছে যেহেতু একাকী নামায আদায়কারী নারী হোক কিংবা পুরুষ হোক তার জন্য ইকামত দেয়ার বিধান রয়েছে। তাই কোন নারী এই দুই রাকাত নামায মসজিদসমূহে সাধারণ আযান হওয়া ও তিনি সেই ওয়াক্তের ফরয নামায আদায় করার মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করতে পারেন। এটি মসজিদসমূহে নামায অনুষ্ঠিত হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয়।
ইবনে কুদামা (রহঃ) ‘আল-মুগনী’ গ্রন্থে (২/৭৪) বলেন: “প্রত্যেক মুসল্লির জন্য আযান ও ইকামত দেয়া উত্তম। তবে কাযা নামায পড়লে কিংবা আযানের ওয়াক্ত নয় এমন সময়ে নামায আদায় করলে উচ্চস্বরে আযান দিবে না।”[সমাপ্ত]
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব