যিলহজ্জের দশ তারিখের বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য আছে কি?
কোরবানীর দিনের ফযিলত
প্রশ্ন: 36477
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীরা বিশেষ দুইটি দিন খেল-তামাশা করত। তিনি বললেন: আল্লাহ এ দুই দিনের বদলে তোমাদেরকে উত্তম দুইটি দিন দিয়েছেন: ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।[সুনানে আবু দাউদ (১১৩৪), আলবানী ‘সিলসিলা সহিহা’ গ্রন্থে (২০২১) হদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
তাই আল্লাহ এ উম্মতকে খেল-তামাশার দুইটি দিনের পরিবর্তে আল্লাহর যিকির, শুকর, ক্ষমা ও গুনাহ মাফের দুইটি দিন দিয়েছেন।
তাই দুনিয়াতে মুমিনের জন্য তিনটি ঈদ রয়েছে:
একটি ঈদ প্রতি সপ্তাহে আবর্তিত হয়। অপর দুইটি ঈদ প্রতিবছর একবার একবার করে আসে; একবারের বেশি আসে না।
প্রতি সপ্তাহে যে ঈদটি আবর্তিত হয় সেটি হচ্ছে- জুমাবার। আর যে ঈদদ্বয় বছরে একবারের বেশি আসে না; বরং প্রতিবছর শুধু একবার আসে সে ঈদদ্বয়ের একটি হচ্ছে- ঈদুল ফিতর তথা রমযানের রোযা ভাঙ্গাকেন্দ্রিক উৎসব। এটি রমযানের রোযা পূর্ণ করার সাথে সম্পৃক্ত। যে রোযা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। মুসলমানেরা তাদের ফরয রোযার মাস পূর্ণ করার পর, রোযা সম্পন্ন করার পর আল্লাহ তাদের জন্য ঈদ উদযাপন করা বিধান দিয়েছেন; যে উৎসবে তারা আল্লাহর শুকর, তাঁর যিকির ও তাকবীর দিতে দিতে আল্লাহর হেদায়েতের আলোকে একত্রিত হয়। এ উৎসবের দিন আল্লাহ তাদের জন্য নামায ও সদকা করার বিধান দিয়েছেন।
দ্বিতীয় ঈদ হচ্ছে- যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে কোরবানীর ঈদ। এটি দুই ঈদের মধ্যে সর্বোত্তম ও মহান। এ ঈদ হজ্জ সম্পন্ন করার পর দেয়া হয়েছে। যখন মুসলমানেরা হজ্জ শেষ করে তখন আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন।
আরাফার দিন আরাফা মাঠে অবস্থান করার মাধ্যমে হজ্জ পূর্ণতা লাভ করে। আরাফাতে অবস্থান হচ্ছে- হজ্জের সবচেয়ে মহান রুকন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “হজ্জ হচ্ছে- আরাফা”[সুনানে তিরমিযি (৮৮৯), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (১০৬৪) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
আরাফার দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন। এ দিনে যেসব মুসলমান আরাফাতে অবস্থান করে কিংবা আরাফাতে অবস্থান করে না; আল্লাহ তাআলা উভয় ধরণের মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন। এ কারণে আরাফার দিনের পরের দিন সর্বস্থানের সকল মুসলমানের জন্য ঈদের দিন; যারা হজব্রত আদায়ের জন্য হাযির হতে পেরেছে কিংবা হাযির হতে পারেনি।
এ দিনে নুসুকের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের বিধান সকলের জন্য দেয়া হয়েছে। নুসুক হচ্ছে- কোরবানীর পশুর রক্তপাত করা। কোরবানীর দিনের সংক্ষিপ্ত ফযিলত নিম্নরূপ:
১। আল্লাহর কাছে এটি একটি উত্তম দিন:
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে (১/৫৪) বলেন: “আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে- কোরবানীর দিন। এটি হচ্ছে- বড় হজ্জের দিন। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৭৬৫) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তিনি বলেন: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে মহান দিন হচ্ছে- কোরবানীর দিন।[আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
২। এটি হচ্ছে বড় হজ্জের দিন:
ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: যে বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজ্জ আদায় করেন সে বছর কোরবানীর দিন তিনি জমরাতগুলোর মাঝখানে দণ্ডায়মান হয়ে বলেন, আজ বড় হজ্জের দিন”[সহিহ বুখারী (১৭৪২)]
বড় হজ্জ আখ্যায়িত করার কারণ হল: হজ্জের অধিকাংশ আমল এই দিনে পালিত হয়। এই দিন হাজীসাহেবগণ নিম্নোক্ত আমলগুলো পালন করেন:
১- আকাবা জমরাতে কংকর নিক্ষেপ করেন।
২- কোরবানী করেন।
৩- মাথা মুণ্ডন করেন কিংবা চুল ছোট করেন।
৪- তাওয়াফ করেন।
৫- সায়ী করেন।
৬- এটি সর্বস্তরের মুসলমানদের ঈদের দিন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আরাফার দিন, কোরবানীর দিন ও তাশরিকের দিনগুলো আমরা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। এ দিনগুলো পানাহারের দিন।”[সুনানে তিরমিযি (৭৭৩), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]
আল্লাহই ভাল জানেন।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব