নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করার জন্য কোন স্থানগুলোতে অবস্থান করেছিলেন?
হজ্জের মধ্যে দোয়া করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে স্থানগুলোতে অবস্থান করেছেন
প্রশ্ন: 47732
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
আমাদের মনে হচ্ছে প্রশ্নে দোয়ার স্থানসমূহ দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হজ্জের মধ্যে দোয়ার জন্য যে স্থানগুলোতে অবস্থান করেছেন সেটা বুঝিয়েছেন। আলেমগণ উল্লেখ করেছেন যে, এ ধরণের অবস্থানস্থল ছয়টি।
ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:
তাঁর হজ্জ দোয়ার ছয়টি অবস্থানকে অন্তর্ভুক্ত করেছে:
প্রথম স্থান: সাফা পাহাড়। দ্বিতীয় স্থান মারওয়া পাহাড়। তৃতীয় স্থান: আরাফার মাঠ। চতুর্থ স্থান: মুযদালিফাত। পঞ্চম স্থান: প্রথম জমরাত। ষষ্ঠ স্থান: দ্বিতীয় জমরাত।[যাদুল মাআ’দ (২/২৮৭, ২৮৮)]
স্থানগুলোর বিস্তারিত বিবরণ:
১। সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উপর দোয়া করা: তিনবার তাকবীর দেয়ার পর কিবলামুখী হয়ে দোয়া করবেন। এরপর সুন্নাহতে উদ্ধৃত যিকিরটি তিনবার বলবেন এবং যিকিরের মাঝখানে দোয়া করবেন।
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
দোয়াতে হাত তোলার ন্যায় হাতদুটো তুলে তিনবার আল্লাহু আকবার বলবেন এবং হাদিসে উদ্ধৃত যিকির বলবেন। এর মধ্যে রয়েছে এই যিকিরটি:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ، أَنْجَزَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ
(একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর। আর তিনি সকল কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন। আর তিনি সকল বিরোধী দল-গোষ্ঠীকে একাই পরাস্ত করেছেন।) এরপর যা ইচ্ছা দোয়া করবেন। এরপর যিকিরটি পুনরায় পড়বেন এবং তারপর যা ইচ্ছা দোয়া করবেন। এরপর যিকিরটি তৃতীয়বার পুনরায় পড়বেন এবং মারওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাবেন।[আল-শারহুল মুমতি’ (৭/২৬৮)]
দোয়া করতে হবে চক্করগুলোর শুরুতে; শেষে নয়। কারণ চক্করগুলোর শেষে মারওয়ার উপর কোন দোয়া নেই।
শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
অনুরূপভাবে এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, সাফা-মারওয়ার ওপর দোয়া হবে চক্করগুলোর শুরুতে; চক্করগুলোর শেষে নয়। মারওয়া পাহাড়ের ওপর শেষ চক্করে দোয়া নেই। কেননা সেটি সাঈর সমাপ্তি। দোয়া করা হয় চক্করের সূচনাতে; যেমনিভাবে তাওয়াফের চক্করের শুরুতে তাকবীর দেয়া হত। অতএব, যখন মারওয়া পাহাড়ের ওপর সাঈ শেষ করবে তখন (না দাঁড়িয়ে) চলে যাবেন। অনুরূপভাবে হাজারে আসওয়াদের নিকটে তাওয়াফ শেষ করার পরও দাঁড়াবেন না; চলে যাবেন এবং চুমো খাওয়ার কিংবা স্পর্শ করার কিংবা ইশারা করার প্রয়োজন নেই। আমরা যে কারণটি দর্শালাম সেটার বিপক্ষে কোন আপত্তিকারী আপত্তি করার আগে আমরা বলব যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই করেছেন।[আল-শারহুল মুমতি’ (৭/৩৫২)]
২। আরাফার দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া করা। হাজীসাহেবের উচিত এই দিন বেশি বেশি দোয়া করা। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে- আরাফার দিনের দোয়া। আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ সর্বোত্তম যে কথাটি বলেছি সেটি হলো:
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ”
।[সুনানে তিরমিযি (৩৫৮৫), আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]
৩। হাজীসাহেবের জন্য মুযদালিফাতে ফজরের নামাযের পরে খুব ফর্সা হওয়া পর্যন্ত দুই হাত তুলে কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা সুন্নত। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: “তোমরা আল-মাশআর আল-হারামের কাছে আল্লাহ্কে স্মরণ কর”।[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৯৮]
৪। প্রথম জমরা (ছোট জমরা) ও দ্বিতীয় জমরা (মাঝারি জমরা)-র পর দোয়া করা। এ দোয়াটি হবে তাশরিকের দিনগুলোতে। বড় জমরার পর দোয়া করার বিধান নেই; না ঈদের দিনে; আর না এরপরের দিনগুলোতেও।
আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
সূত্র:
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব