আরাফার দিনের ফযিলতগুলো কি কি?
আরাফার দিনের ফযিলত
প্রশ্ন: 7284
আলহামদুলিল্লাহ ও রাসুলে আল্লাহ ও তাঁর পরিবারের উপর সালাম ও প্রশংসা
আরাফার দিনের ফযিলতের মধ্যে রয়েছে:
১. দ্বীন ও আল্লাহর নেয়ামত পরিপূর্ণ হওয়ার দিন:
সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, এক ইহুদী লোক তাঁকে বলল: হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে এমন একটি আয়াত রয়েছে যদি আমরা ইহুদীদের উপর এ আয়াতটি নাযিল হত তাহলে আমরা সে দিনটিকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তিনি বললেন: কোন আয়াতটি? সে বলল: الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا [المائدة: 3] (অর্থ- আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম।)[সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৩] উমর (রাঃ) বলেন: যে দিন ও যে স্থানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে সেই দিন ও সেই স্থানটি আমরা জানি: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমাবার আরাফার ময়দানে দণ্ডায়মান অবস্থায় ছিলেন।
২. আরাফার মাঠে অবস্থানকারীদের জন্য এটি ঈদের দিন:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আরাফার দিন, কোরবানীর দিন ও তাশরিকের দিনগুলো আমরা মুসলমানদের জন্য ঈদ বা উৎসবের দিন। এ দিনগুলো পানাহারের দিন।”[হাদিসটি সুনান গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে] উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন: الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ শীর্ষক আয়াতটি নাযিল হয়েছে জুমার দিন, আরাফার দিন। আলহামদু লিল্লাহ উভয় দিন আমাদেরর জন্য ঈদ।
৩. এটি এমন একটি দিন যেই দিনকে দিয়ে আল্লাহ তাআলা কসম করেছেন:
মহান সত্তা মহানকে দিয়ে কসম করে থাকেন। এটি এমন দিন আল্লাহর বাণী: “আর প্রতিশ্রুতি দ্রষ্টা ও দৃষ্টের”[সূরা বুরুজ, আয়াত: ৩] এর মধ্যে যেদিনকে বলা হয়েছে- দৃষ্ট। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “প্রতিশ্রুত দিন হচ্ছে- কিয়ামতের দিন। আর দৃষ্ট দিন হচ্ছে- আরাফার দিন। আর দ্রষ্টা হচ্ছে- জুমার দিন।”[সুনানে তিরমিযি; আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]
এটি হচ্ছে সে বেজোড় যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা কসম করেছেন তাঁর বাণী: “শপথ জোড় ও বেজোড়ের” [সূরা আল-ফজর; আয়াত: ৩] আয়াতের মধ্যে। ইবনে আব্বাস বলেন: “জোড় হচ্ছে- ঈদুল আযহার দিন। আর বেজোড় হচ্ছে আরাফার দিন।” ইকরিমা ও দাহ্হাকও এ কথা বলেন।
৪. এই দিন রোযা রাখলে দুই বছরের পাপ মোচন হয়:
আবু কাতাদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফার দিন রোযা রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন: “এটি বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের পাপ মোচন করে।”[সহিহ মুসলিম]
যারা হাজী নন তাদের জন্য এ রোযা রাখা সুন্নত। যারা হাজী তাদের জন্য আরাফার দিন রোযা থাকা সুন্নত নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার দিন রোযা রাখেননি। তাঁর থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি আরাফার ময়দানে আরাফার দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।
৫. এটি এমন দিন যেদিন আল্লাহ তাআলা বনী আদম থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন:
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, “নিশ্চয় আল্লাহ নামানে -অর্থাৎ আরাফার ময়দানে- আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। তিনি আদমের মেরুদণ্ডে তাঁর যত বংশধরদের রেখেছেন তাদের সবাইকে বের করে এনে অণুর মত তাঁর সামনে ছড়িয়ে দেন। এরপর সরাসরি তাদের সাথে কথা বলেন। তিনি বলেন: আমি কি তোমাদের প্রভু নই? তারা সকলে বলে: হ্যাঁ অবশ্যই; আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। এটা এ জন্যে যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, ‘আমরা তো এ বিষয়ে গাফেল ছিলাম। কিংবা তোমরা যেন না বল, আমাদের পিতৃপুরুষরাও তো আমাদের আগে শির্ক করেছে, আর আমরা তো তাদের পরবর্তী বংশধর; তবে কি (শির্কের মাধ্যমে) যারা তাদের আমলকে বাতিল করেছে তাদের কৃতকর্মের জন্য আপনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৭২-১৭৩] হাদিসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে, আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। অতএব, কতই না মহান সেই দিন এবং কতইনা মহান সে প্রতিশ্রুতি।
৬. এটি গুনাহ মাফের দিন, জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির দিন, আরাফাবাসীদের নিয়ে গৌরব করার দিন:
সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, “আরাফার দিনের চেয়ে উত্তম এমন কোন দিন নেই যেই দিন আল্লাহ সবচেয়ে বেশি বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন; নিশ্চয় তিনি নিকটবর্তী হন; অতঃপর তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গৌরব করে বলেন: এরা কি চায়?”
ইবনে উমর (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: নিশ্চয় আল্লাহ আরাফাবাসীদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গৌরব করে বলেন: আমার বান্দাদের দিকে তাকাও; তারা এলোমেলো চুল ও ধুলোমলিন হয়ে আমার কাছে এসেছে।”[মুসনাদে আহমাদ; আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
আল্লাহই ভাল জানেন
সূত্র:
শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ